নয়াকৃষির কোহিনুর বেগম: আমি সারাজীবন নয়াকৃষির সাথে থাকবো
পাবনার আরশিনগর বিদ্যাঘরের সমন্বক আজমিরা খাতুন ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ইউনিয়নের শ্যামপুর গ্রামে গিয়েছিলেন নয়াকৃষিতে নতুন কৃষকদের শিক্ষাসঙ্গ আয়োজনের জন্য। সেখানে তার সাথে দেখা হয় নয়াকৃষির পুরাতন একজন কৃষকের সাথে যিনি অনেক আগে শিক্ষাসংগ করেছেন এবং এখনও নয়াকৃষির কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি নিজ থেকেই এগিয়ে এসে বলেন, নয়াকৃষির সাথে তার পরিবারের সম্পর্ক। এবং বলেন ‘আমার এখন যতটুকু হয়েছে তা নয়াকৃষির মাধ্যমে’। তাঁর সাথে নয়াকৃষির পরিচয় শিক্ষাসঙ্গ আয়োজনের পাশাপাশি যাদের জমি নেই এবং গরিব পরিবারে বকনা বাছুর দেয়া এবং “আধি” কর্মসুচির মাধ্যমে গরিব মহিয়ালদের সাহায্য করার জন্য। এই কর্মসুচিতে প্রথম বকনা বাছুর দিয়ে সেটা বড় হয়ে আবার যখন বাছুর হবে সেই বাছুর অন্য আর একজন গরিব মহিলাকে দেয়া হবে। এইভাবে অনেক মহিলা উপকৃত হবে।
কোহিনুরের গল্প এই রকম
আজ থেকে দশ বার বছর আগে আমার স্বামী এবং আমি পরের বাড়িতে কাজ করে আমাদের সংসার চালাতাম। আমার দুই ছেলে এক মেয়ে। খুব কষ্টে আমাদের দিন কাটতো। অনেকদিন গেছে এক বেলা খেয়ে থাকছি। তখন নয়াকৃষির কিছু কর্মী আমাদের গ্রামে আসেন। আমার এবং আমার পরিবারের এই অসহায় অবস্থা দেখে আমাকে একটি গরুর বকনা বাছুর দেয়। আল্লাহর রহমতে আমি সেই বাছুর যত্ন করে বড় করি। এই বকনা বাছুর বড় হয়। বড় হয়ে এই গরু থেকে আরেকটা বকনা বাছুর হয়।
আমার গাভিটা ৬ থেকে ৭ কেজি দুধ দিতো। দুধ আমরা বাজারে বিক্রি করতাম। ভালো টাকাই আয় হতো। বাছুরটাও ভালোভাবেই বড় হতে থাকলো। এরপর আমরা বাছুরটা আমার প্রতিবেশী একজনকে দিয়ে দেই। আমার গাভিটা আবার ভরে। আবার বাচ্চাদের দেয়। এভাবেই আমি প্রতিবছর বাছুর পাই। এই দশ বার বছরে আমি গরু থেকে অনেক পাইছি। আমি প্রায় ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা আমি আয় করতে পারছি।
এখনো আমার গোয়ালে দুটি গরু আছে। একটা গাভী, একটা ষাঁড় বাছুর। আমি যে ৭ থেকে ৮ লক্ষ টাকা আয় করছি সেই টাকা আমি কাজে লাগিয়েছি। প্রথম কাজে লাগাই আমার সংসারের খাবার কিনতে। কারন আমার খুব অভাব ছিল ওই সময়। ঠিকমত আমার সন্তানদের খাবার দিতে পারতাম না। তখন দুধ বিক্রি করে সন্তানদের খাবার ব্যবস্থা করতাম। এরপরে আমি আমার ছোট ছেলের বিয়ে করাই। বিয়েতে যত খরচ হয়। আমি গরুর থেকে আয় করেই খরচ করেছি। ছেলের বউর গয়না করে দিয়েছি। গোয়াল ঘর তৈরি করেছি। হাঁস মুরগি কিনেছি, ছাগল কিনেছি। এখন আমার পাঁচটি খাঁশি আছে এবং দুটি মা ছাগল আছে। ১২ টি হাঁস আছে, ৪৩ টি মুরগি আছে, কবুতর আছে। এছাড়া দুইটা গরু আছে। আমি কিন্তু এই গরু থেকে একটি গরু কুরবানীও দিয়েছি। গত বছর গরু বিক্রি করে আমি ১০ কাঠা ভুই (জমি) কট নিছি। দশ কাটা ভুই কট নিতে আমার খরচ হয়েছে দেড় লক্ষ টাকা।
আল্লাহর রহমতে এখন আর আমার পরের বাড়িতে কাজ করতে হয় না। আমার স্বামী নিজেদের আবাদ লগি করে। সময় পেলে পরের জমিতে কাজ করে। আল্লাহর রহমতে আমার সংসার খুব ভালো চলে। আমার সন্তানরাও এখন কাজকর্ম করে। আমার সংসারে এই অভাব অনটন দূর করতে নয়াকৃষির অবদান আমি কখনোই ভুলবো না। আমি সারাজীবন নয়াকৃষির সাথে থাকবো।