আমলকী
Tuesday 15 November 2016অন্যান্য স্থানীয় নাম: আমলা, ধাত্রী
বৈজ্ঞানিক নাম : Phyllanthus emblica/ Emblica officinalis পরিবার : Euphorbiaceaeপ্রধান ব্যবহার :ফল/ওষুধ
অন্যান্য ব্যবহার :আমলকীর আচার ও চাটনী তৈরি করে সারা বছর সংরক্ষণ করা হয়। আবার বাজারে বিক্রিও করা যায়।
আরো পড়ুন
আমলকী মাঝারি আকারের পাতাঝরা গাছ। উচ্চতায় ৩ থেকে ৫ মিটার পর্যন্ত হয়ে থাকে। গাছের বাকল ধূসর হলুদ রংয়ের। ফুল ছোট সবুজাভ হলুদ। ফল রসালো সবুজ গোলাকৃতি। স্বাদ কষা টকযুক্ত।
আমলকীর বিস্তার: আমলকী গাছ বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার এবং চীনে স্বাভাবিক ভাবেই পাওয়া যায়। বাংলাদেশের সব্রত্র জন্মে। তবে চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং সিলেটের পাহাড়ীয়া এলাকায় বেশী পাওয়া যায়।
আমলকীর বংশবিস্তার: আমলকীর বংশ বিস্তারের জন্য বীজ, গাছের ডালের কাটিং এবং গুটি কলম ব্যবহার হয়ে থাকে। আমলকী ফল ত্রিফলার একটি উপাদান। আমলকী গাছ লাগানোর ৫ থেকে ৫ বছরের মধ্যে ফল ধরতে শুরু করে। ফল এবং বীজ সংগ্রহের সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি। সব ধরণের মটিতে আমলকী হয় তবে দোঁ-আশ মাটিতে ভালো হয়।
ফল সংগ্রহ এবং সংরক্ষণ পদ্ধতি: আমলকী শীতকালে পাকতে শুরু করে। সাধারণত: ফল পাকতে শুরু করলে ঈষৎ হলদে রং ধারণ করে, তখনই ফল সংগ্রহ করতে হয়। ফল মাটিতে পড়ে আঘাত লেগে থেঁতো না হয় সে দিকে লক্ষ্য রাখতে হবে। এরপর ভালোভাবে পরিস্কার করে ধুয়ে রৌদ্রে শুকিয়ে তা সংরক্ষণ করতে হয়।
আমলকীর ওষুধি গুণাগুন: আমলকীর ব্যবহার্য অংশ হচ্ছে ফল, কাঠ, ছাল এবং পাতা। এ ফল হৃদযন্ত্র ও মস্তিস্কের শক্তি বৃদ্ধি করে। আনন্দদায়ক, বমি নিবারক, শরীরের জ্বালাপোড়া প্রশমক, পিপাসা নিবারক, ভিটামিন-সি, ভিটামিন-বি১ এবং ভিটামিন বি২ এর অভাবজনিত রোগসমূহে ফলপ্রদ।
রাসায়নিক উপাদান: আমলকী ফল প্রাকৃতিক ভিটামিন সি’তে সমৃদ্ধ। এতে রয়েছে ট্যানিন ও কলয়ডাল পদার্থ ফাইলেমব্লিক এসিড (Phyllemblic acid), গ্যালিক এসিড (Gallic Acid), এবং ইমাব্লিকোল (Emblical) থাকে। তাছাড়া ফাইলেমব্লিন (Phyllemblin) ও মিউসিক এসিড(Mucic acid) থাকে। বীজে অনুদ্বায়ী তেল, ফসফাইটাইড (Phosphatides) আবশ্যকীয় তেল থাকে।
ওষুধি ব্যবহার:
■ মস্তিস্ক ও হৃদযন্ত্রের দুর্বলতায় বিশেষ ফলপ্রদ।
■ এ ফলে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে।
■ আমলকী ফলের রস কাশি এবং জ্বরের জন্য বেশ কাযকরী।
■ যে কারণেই হোক ঘুম না হলে কাঁচা বা শুকানো আমলকী কাঁচা দুধে বেটে একটু মাথার তালুতে লাগালে ঘুম আসে।
■ পেট ফাঁপা বা অম্ল হলে ৩/৪ গ্রাম শুকানো আমলকী এক গ্লাস পানিতে আগের দিন ভিজিয়ে রেখে পরদিন ভাক খাওয়ার সময় সাধারণ পানির পরিবর্তে এ পানি পান করলে উপকার পাওয়া যায়। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে আমলকী যেন কোনো ধাতব পাত্রে ভিজানো না হয়।
■ চোখ ওঠা রোগে দুটি শুকানো আমলকী ভালো করে ধুয়ে আধা কাপ পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে। পরদিন সকালে পানিটা ছেঁকে ২/৩ ফৌঁটা চোখে দিতে হবে। দু’তিন বার ব্যবহারে চোখ ওঠা সেরে যাবে।
■ পিত্ত বেদনায় এক/দেড় চা-চামচ আমলকীর রসে সামান্য চিনি মিশিয়ে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
■ অন্য কোনো ওষুধে বমি বন্ধ না হলে ৩/৪ গ্রাম শুকানো আমলকী এক গ্লাস পানিতে ভিজিয়ে রেখে দুই ঘন্টা পর ছেঁকে নিয়ে সে পানিতে আধা চা-চামচ পরিমাণ শ্বেত চন্দন ঘসাসহ একটু চিনি মিশিয়ে অল্প অল্প করে খেলে উপকার পাওয়া যায়।
■ কোনো প্রকার sepsis এর (বিসর্প জ্বর) কিছুতেই না কমলে আমলকীর রসে অল্প ঘি মিশিয়ে খেলে এ জ্বরের উপশম হয়।
■ ত্রিফলা অর্থাৎ আমলকী, হরিতকী এবং বহেরা এর প্রতিটির সম-পরিমাণ গুঁড়ার শরবত কোলেস্টেরল কমাবার অর্থাৎ ব্লাড় প্রেসার বা রক্তচাপ কমাবার মহৌষধ। এক ওষুধ গবেষক দলের মতে, আধুনিক যে কোনো এ্যালোপ্যাথিক ওষুধের তুলনায় ত্রিফলা কোলেস্টেরল কমাবার ক্ষেত্রে অনেক বেশী কার্যকরী।
■ জ্বর হলে মুখে রুচি থাকে না সেই সময় আমলকির রস লবন দিয়ে খেলে মুখের রুচি বাড়ে।
■ অকালে চুল পাকলে বা মাথার চুল উঠলে আমলকি ছেঁচে রস করে মাথায় লাগালে চুল পড়া বন্ধ হয় এবং চুলের গোড়া শক্ত হয়। সপ্তাহে তিনদিন ব্যবহার করলে ভাল উপকার পাওয়া যায়।
■ কারো পেটে পিত্তের দোষ থাকলে আমলকির রস করে খাওয়ালে পিত্তের দোষ নষ্ট হয়ে যায়।
সূত্র: ১। ইউজফুল প্ল্যান্ট অব বংলাদেশ, প্রকাশনা: দি এড কমিউনিকেশন, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম।
২। উবিনীগ মাঠ গবেষণার তথ্য