গ্রাম ও দুর্গম পাহাড়ী এলাকার চিকিৎসা সেবা যেন ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নেই’
গ্রাম ও দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় বসবাসরত সৃষ্টির সেরা জীবগুলো ডিজিটাল যুগেও সুচিকিৎসা বঞ্চিত। সরকার ঢাকঢোল পিটিয়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার কথা বলে বেড়ালেও এসব এলাকার বাস্তব চিত্র হচ্ছে ‘কাজীর গরু কিতাবে আছে, গোয়ালে নাই।’ বিশেষ করে গ্রাম ও পার্বত্য অঞ্চলের বেশিরভাগ আদিবাসী নারী-পুরুষ শিশুরা সরকারি স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত। তারা সৃষ্টিকর্তার উপর ভরসা করে বেঁচে আছে। যে কারণে এসব এলাকায় ‘দু’টি সন্তান যথেষ্ট’- এ তথ্য মানতে নারাজ।
সরকারি ভাবে ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার জন্য স্বাস্থ্যকেন্দ্র স্থাপন করে ডাক্তার-নার্স নিয়োগ দিলেও বেশিরভাগ চিকিৎসক নির্ধারিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে উপস্থিত থাকে না মাসের পর মাস। নিয়মিত মাশুহারা নিলেও দরিদ্র লোকজন চিকিৎসা সেবা থেকে চরমভাবে বঞ্চিত। কালে-ভাদ্রে ডাক্তার-নার্স পাওয়া গেলেও যথাযথ ভাবে ঔষধপত্র পাওয়া যায় না। নিয়োগ দেয়া সিংহভাগ ডাক্তার কর্মস্থলে না থাকলেও উপজেলা সদরে ব্যক্তিগত চেম্বারে চিকিৎসা বাণিজ্যে ব্যস্ত থাকতে দেখা যায়। আবার রোগী ধরার জন্য বাহিরে দালাল চক্রও নিয়োজিত থাকে। অপরদিকে উপজেলা সদরে সরকারি হাসপাতালের চিত্রও অনুরূপ। সরকারি নিয়ম-নীতি তোয়াক্কা না করে বেশিরভাগ ডাক্তার সকাল ১০টা থেকে ১২টা পর্যন্ত চেম্বারে উপস্থিত থাকলেও যথাযথভাবে চিকিৎসা পায় না হতদরিদ্র ও আদিবাসীরা। রোগীরা ব্যবস্থাপত্র পেলেও পায় না ঔষধপত্র। এ ধরণের অভিযোগ বেশুমার। এছাড়া বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পোষ্টিং দিলেও ওইসব বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সপ্তাহে ১/২ দিন কর্মস্থলে নামমাত্র উপস্থিত থাকে। এক্ষেত্রে কারো কোন জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে। কার্যতঃ সরকারি চিকিৎসা সেবা চলছে গকুলের ষাঁড়ের মত।
সরকারি হাসপাতালগুলোতে রোগীদের কল্যাণের স্বার্থে এ্যাম্বুলেন্স, এক্স-রে মেশিন থাকলেও বেশিরভাগ সময় এসব উপকরণ ব্যবহারে অনুপযোগী থাকে। ফলে রোগীরা বাহির থেকে এক্স-রে ও ব্যক্তিমালিকানাধীন এ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে বাধ্য হয়। সবচাইতে করুণ চিত্র হচ্ছে গর্ভবতী দরিদ্র মহিলাদের ক্ষেত্রে। কোন কারণে স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় সন্তান প্রসব না হলে উপজেলা হাসপাতালে গিয়েও সন্তান প্রসবের সুযোগ পায় না। এখানে গাইনী বিশেষজ্ঞ থাকলেও অববেদন থাকে না। ফলে সরকারি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার (OT) গুলোতে ময়লা-আবর্জনার স্তুপে পরিণত হয়েছে। এভাবে অব্যবস্থা অব্যাহত থাকায় দরিদ্র জনগোষ্ঠী সুচিকিৎসা থেকে প্রতিনিয়ত বঞ্চিত হচ্ছে। আবার অনেক ডাক্তারের ভুল চিকিৎসায় জীবন বিপন্ন হচ্ছে বেশুমার রোগাক্রান্ত মানুষের। স্থানীয় সচেতন জনগোষ্ঠীর মতে সরকারি মেডিকেল কলেজগুলোতে লেখাপড়া করে একজন ডাক্তার সৃষ্টির পিছনে জনগণের রাজস্বের অঢেল টাকা ব্যয় হলেও সে মোতাবেক স্বাস্থ্যসেবা জনগণ পাচ্ছে না। অথচ স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া অধিকার জনগণের সাংবিধানিক ভাবে রয়েছে। ডাক্তারদের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে এদেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা কোনদিনই নিশ্চিত হবে না বলে তাদেরই অভিমত।
এম.আর মাহমুদ
চকরিয়া (কক্সবাজার)