তামাক দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নারী যোদ্ধাদের ভূমিকা


তামাকদ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নারী যোদ্ধাদের ভুমিকা শীর্ষক এক মতবিনিময় সভার আয়োজন করেন, তামাক বিরোধী নারী জোট (তাবিনাজ), ৭ নভেম্বর, ২০১৮ কেআইবি কমপ্লেক্স ঢাকা। সহযোগিতায়: ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিড্স (সিটিএফকে)

এ সভায় উপস্থিত ছিলেন: এড.সুমাইয়া ইসলাম,বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র, ফরিদা আখতার, আহ্বায়ক, তামাক বিরোধী নারী জোট, আতাউর রহমান মাসুদ, প্রোগ্রাম অফিসার, ক্যাম্পেন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস্ (CTFK), খালেদা খাতুন, পুষ্টি বিদ বারডেম হাসপাতাল, সাবিনা ইয়াসমিন খান, ডাব্লিউ বিবি ট্রাস্ট, রেহানা সিদ্দিকী, সমাজ কর্মী, প্রফেসার ডা. শারমিন ইয়াসমিন, পাবলিক হেলথ্ ফাউন্ডেশন, অধ্যাপক ডা. সামিনা চৌধুরী ধাত্রীবিদ্যা বিশেষজ্ঞ, ডা. পারভীন: বারডেম হাসপাতাল, অধ্যাপক ড. দিলারা চৌধুরী, রাষ্ট্র বিজ্ঞানী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (অবসর প্রাপ্ত), সরফুদ্দিন আহমেদ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন, সুলতানা আখতার শ্রমিক নেত্রী গ্রীণ বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কাস ফেডারেশন, তাসমীয়া আফরীণ মৌ, চলচিত্র নির্মাতা, রীতা ভৌমিক, সাংবাদিক, যুগান্ত, নাজমি সাবিনা, গবেষক, সাইদা আখতার কুমকুম, সমন্বয়ক, তাবিনাজ সীমা দাস সীমু, পরিচালক, উবিনীগ, রোকেয়া বেগম, গবেষক, উবিনীগ, ফিরোজা বেগম, লালমনিরহাট, নূর-এ-জান্নাত, স্বেচ্ছাসেবী বহুমুখী মহিলা সমাজ কঃ সঃ, রাজশাহী, হোসনে আরা, রুপালী মহিলা উন্নয়ন সংস্থা, নেত্রকোনা, ছায়েরা বেগম, সবুজের যাত্রা, চট্টগ্রাম, রাবেয়া বেগম, মানসিকা মহিলা সংস্থা, লালমনিরহাট, রংপুর, প্রভারানী বাড়াইক, ইনষ্টি: ফর সোস্যাল এডভান্সমেন্ট, মৗলভীবাজার, সিলে, রাবেয়া সুলতানা, নাইস ফাউন্ডেশন, খুলনা, কাউছার পারভীন, বরিশাল মহিলা কল্যাণ সংস্থা, বরিশাল।

সমাজে এবং পারিবারিক জীবনে আমাদের কিছু অভ্যাস যখন সার্বিকভাবে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায় তখন আমাদের উদ্বিগ্ন হতে হয় এবং এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হয়। তেমনি একটি অভ্যাস হচ্ছে তামাক সেবন, যার মধ্যে ধূমপান অর্থাৎ সিগারেট, বিড়ি, হুক্কার ব্যবহার এবং ধোঁয়াবিহীন তামাকদ্রব্য বা পানের সাথে জর্দা ও সাদাপাতা খাওয়া এবং গুলের ব্যবহার। এগুলো ব্যক্তিগত অভ্যাসের ব্যাপার হলেও দেখা যাচ্ছে এর ফলে প্রতিরোধযোগ্য রোগের হার বেড়ে যাচ্ছে এবং মৃত্যু ঘটছে।

ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্যের ব্যবহার কমানো শুধু আইনী প্রক্রিয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখা যাবে না কারণ এর ব্যবহারে সামাজিক কোন বাধা নেই এবং সাংস্কৃতিকভাবেও গ্রহণযোগ্য। কিন্তু এর ব্যবহারের স্বাস্থ্যের ঝুঁকি অনেক বেশি। তাই ব্যবহারকারীদের এই বিষয়ে জানাতে হবে এবং সার্বিকভাবে সমাজে এই বিষয়ে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে।

আমরা তাই উদ্যোগ নিয়েছি সমাজে নানাভাবে যারা অবদান রাখছেন এবং সক্রিয় রয়েছেন তাদের নিয়ে ধোঁয়াবিহীন তামাক দ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে “যোদ্ধা” তৈরি করার। তাঁরা নিজ নিজ কর্মক্ষেত্রে এবং সমাজের তাঁদের নিজের প্রভাবে এ বিষয়ে সচেতন করবেন।

এড. সুমাইয়া ইসলাম, বাংলাদেশ নারী শ্রমিক কেন্দ্র:
আসলে আমি যোদ্ধা তৈরীর কাজই করছি। কিন্তু নিজের ইচ্ছা না থাকলে এটা হয়না। লেবার মাইগ্রেশন নিয়ে কাজ করি। প্রতিমাসে বিভিন্ন জেলায় প্রশিক্ষণ দিতে যাই। সিলেটের হবিগঞ্জে প্রশিক্ষণে ম্যাচসহ সিগারেট নিয়ে আসার জন্য ১২ জন শ্রমিককে প্রশিক্ষণ থেকে বের করে দিতে হয়েছে।

একজন মহিলা ৭ দিনের প্রশিক্ষণে এসেছে তিনি ৫ বিড়া পান নিয়ে এসেছে। যাদের প্রশিক্ষণ করাই তারা পান ছাড়া প্রশিক্ষণ করতে চায় না। আমার প্রশিক্ষণে একজন মেয়ে আছে সে বিদেশে গিয়ে দেড়মাস থেকে ফিরে এসেছে। সে মেয়ে পান, সিগারেট খায়। এটা নিত্য দিনের ব্যাপার হয়ে গেছে। এটার যে ভয়াবহতা এটার যে ইমপ্যাক্ট আছে নারীদের প্রতিরোধ করতে পারছি না।


আমরা মূলত যারা বিদেশ থেকে ফিরে আসে সেইসব নারীদের প্রশিক্ষণ করাই। প্রতিমাসে ৩০০/ ৪০০ মেয়েকে প্রশিক্ষণ দেই। যারা বিদেশ যেতে চায় তারা যদি ঋণ নিতে চায় তা হলে আমরা ব্যবস্থা করি। তাদেরকে নানা ধরনের ওষুধ খাওয়ার যার কারণে তারা এ্যাডিকটেড হয়ে যায়। এবং অসুস্থ্য হয়ে ফিরে আসে তার চিকিৎসা করি। নারী শ্রমিকদের আমরা সাপোর্ট করি। নারীর মুক্তি যদি না হয় নারীর বিকাশ যদি না হয় তা হলে কাজ হবে না। আমরা আছি কাজ করে যান।

তাবিনাজের সব কাজের সাথে যুক্ত হতে চাই। তাবিনাজ নারীর মুক্তি এবং বিকাশের জন্য কাজ করে। প্রতিটি ইসু ধরে কাজ করবো। হারিয়ে যাওয়া মেয়েদের সম্পর্কে জানতে চাই।

প্রেক্ষাপট নিয়ে আলোচনা: সাইদা আখতার কুমকুম: বাসনা মন্ডলের ভিডিও দেখান:

ফরিদা আখতার:
নীতি নির্ধারণী মহলে কাজ করছি। ভাল খাবার খাওয়ার পরেও পুষ্টি পাচ্ছে না। গার্মেন্টে অনেক তামাকের ব্যবহার হয়। শিক্ষকরা সামাজিক ভাবে যুক্ত তারা কথা বললে মানুষ শুনবে। রেহানা সিদ্দীকী একজন শিল্পী, সমাজকর্মী তাদের কথা মানুষ শুনবে। দেবী সিনেমায় মিসির আলী যেভাবে ধুমপান করছেন সেটা দেখানো হয়েছে স্ক্রলে অবশ্য লেখা আছে ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। গল্পের প্রয়োজনে দেয়া যেতে পারে কিন্তু বিস্তারিত ভাবে দেখানোর সুযোগ নাই। উত্তম কুমার অনেক ধূমপান করতেন। সুচিত্র সেন পরোক্ষ ধূমপানের শিকার।

তাবিনাজ সদস্যদের বক্তব্য:

নূর-এ- জান্নাত রাজশাহী ইয়থ গ্রুপ এবং সরকারি সচেতনতার কাজ করি । রাজশাহী সদরে ৩৫০ জন নারী সদস্য আছে তাদের মাধ্যমে ১৫ টি ওয়ার্ডে প্রশিক্ষণের কাজ করি। নারী সদস্যরা সেশনে কাজ করছে, উঠান বৈঠক করে। রাজশাহী মেডিকেলের ইমারজেন্সী গেটে ১৮ বছরের নীচের বাচ্চারা তামাকদ্রব্য বিক্রি করে প্রতিবাদ করায় ঐ দোকান সেখান থেকে উঠে গেছে। এটা আমাদের একটা অর্জন। ১৮ টি এনজিও পার্টনার আছে তাদের নিয়ে কাজ করি।

ভিজিডি কার্ডধানী ,ল্যাকটেটিং মা তাদের নিয়ে ইউনিয়ন পর্যায়ে প্রশিক্ষণ করি। সেখানে তাবিনাজের পক্ষ হয়ে ৫/১০ মিনিট ধোঁয়াবিহীন তামাক নিয়ে কথা বলি। আমরা আমাদের কাজের পাশাপাশি তাবিনাজের কাজ করছি। ভিজিডি প্রশিক্ষণে মহিলাদের বাধ্যতামূলক থাকতে হয়। কমিউনিটি রেডিও নিয়ে কাজ করছি। সেখানে তাবিনাজের একটি প্রোগ্রাম করতে চাই।


রাবেয়া লালমণির হাট: সচেতনতা মূলক কাজ করি। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের সাথে কাজ করি। ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিউনিটি ক্লিনিক আছে সেখানে রোগীদের সাথে ধোঁয়াবিহীন তামাক নিয়ে আলোচনা করি। টাক্সফোর্স মিটিং এ ধোঁয়াবিহীন তামাক নিয়ে আলোচনা করি। ব্যবহারকারীদের সতর্ক করি। সিভিলসার্জন অফিসে মিটিং হয় তিনি মিটিং ডাকেন সেখানে ডিসি, সিভিলসার্জন, কৃষি কর্মকর্তাসহ ২১ জন সদস্য থাকেন।


কাউছার পারভীন, বরিশাল: তাবিনাজের সদস্য হিসেবে বিভাগীয় পর্যায়ে কাজ করছি। সচেতনামূলক কাজ করছি। বরিশাল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রসূতি ওয়ার্ডে ১৪০ রোগী ভর্তি হয় সেখানে ৪০০/ ৫০০ ডেলীভারী হয় প্রতি মাসে। সিট আছে ৫০ টি এর সাথে রোগীর আত্মীয় বেশি থাকে। সপ্তাহে দুই দিন কাজ করি নার্সেদের সাথে মিটিং হয়। হাসপাতালে ২১ বিশিষ্ট কমিটি আছে তাদের সাথে কাজ করি। হাসপাতালে পান খাওয়া নিষেধ আছে। জর্দার কৌটায় ৫০% জুড়ে স্বাস্থ্য সচিত্র বানী আছে কিনা সেটা দেখার জন্য স্থানীয় বাজারে ফলোয়াপ করি । ১৮ বছরের নীচের শিশুদের দিয়ে বেচাকেনা করানো হচ্ছে কিন্তু কেউ নিষেধ করছে না। শিশুদের ছবি তুললে বলে ছবি তুলছেন কেন? নারী শ্রমিকরা বেশি ধোঁয়াবিহীন তামাক ব্যবহার করে তারা মুখে সাদা পাতা দিয়ে রাখে। অনেক চেষ্টা করেছি কিন্তু ট্যাক্সফোর্সের সদস্য হতে পারিনি।



সায়রা বেগম চট্টগ্রাম:
২০১৩ সাল থেকে তাবিনাজের সদস্য হিসেবে চট্টগ্রামের পটিয়ায় কাজ করছি। সচেতন মূলক কাজ করছি। ধোঁয়াবিহীন তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য মোবাইল কোর্ট করেছি। যে সব কারখানায় জর্দা গুলের ক্যমিকাল তৈরী হয় সেখানে কোন সাইন বোর্ড থাকেনা। খুঁজে খুঁজে আমরা কারখানা বের করে সেখানে ম্যাজিজটেড, পুলিশসহ গিয়ে বাড়ি ঘেরাও করেছি। সেখানে অনেক ক্যামিকেলের ড্রাম ছিল ১০/১২ সিসি ক্যামেরা ছিল কারখানায়। আমাদের দেখে সবাই পালিয়ে যায়। ২/৩ ঘন্টা সেখানে যুদ্ধ করেছি। মালিক রুমে ঢুুকতে দেয় না জোর করে ঢুকেছি। ম্যাজিজটেড বলেন আপনারা সাংবাদিকদের ডাকেন। পুলিশ তাদের থানায় নিয়ে যায়। আমাকে বলে আপনি বাদি হন কেসের। টিএনও বলে পেছনের দরজা দিয়ে পালিয়ে যান। আমাকে মহিলা কমিশনার ফোন করে হুমকি দেয় ভয় দেখায়। আমি বলেছি দেশের জন্য কাজ করছি। প্রতি মাসে মিটিং হয় ল্যাকটেটিং মাদের তামাকের কুফল নিয়ে তাদের সাথে আলোচনা করি। চট্টগ্রাম মেডিকেলে আগে যেখানে সেখানে পানের পিক ফেলতো এখন আমাদের কাজের ফলে তারা পিক ফেলানোর জন্য ড্রাম দিয়েছে। এটা আমাদের একটা অর্জন। চট্টগ্রাম ধোঁয়াবিহীন তামাক নিয়ে শুধু আমি কাজ করি। টাক্সফোর্স কমিটেতে আমাদের পাত্তা দেয় না। কিন্তু মিটিং যখন হয় আমাদের ডাকলে আমরা যাই।

গার্মেন্ট শ্রমিক নেত্রী সুলতানা আখতার:
আমি যোদ্ধা হতে পারবো কিনা। গার্মেন্টস সেক্টরে ৪৫ লক্ষ শ্রমিক কাজ করে সেখানে নারী এবং পুরুষ আছে। মিরপুর একটি গার্মেন্টে একজন শ্রমিক ২ বিড়া পান ধুইতেছে । সে কিভাবে পান নিয়ে ভিতরে ঢুকলো সেখানে সিকিউরিটি কি করছে। ৩ জনে মিলে সেখানে পান খায়। শ্রমিক জানে যে কাপড়ে ছিটা পড়লে বায়ার মাল নিবে না। তার পরও তারা লুকিয়ে লুকিয়ে পান খায়। গার্মেন্ট নেতা আমিরুল হক আমিন দীর্ঘ দিন ধরে পান খাওয়ার কারণে তার ক্যান্সার হয়েছে। খুরশেদ মারা গেছে ধূমপানের জন্য। তাজরীন ফ্যাশনে আগুন লাগার কারণ পুরুষ শ্রমিকরা সিগারেট খেয়ে জুটের ওপর ফেলেছিল সেখান থেকে আগুন লাগে। ৬৫ জন শ্রমিক মারা যায় ৮৫ জন আহত হয়েছে। পান, জর্দা খেলে গলায়, ঘা হয়। আমি আইএলওর টেইনার মিরপুরে শ্রমিকদের ট্রেনিং করাই সেখানে তাদের সচেতন করতে পারি। সিগারেট খাওয়ার জন্য সময় নষ্ট হয়। তাবিনাজের যোদ্ধা হিসেবে আমাকে নিলে খুশী হব।


অধ্যাপক ডা, সামিনা চৌধুরী:
২০১৩ সালে মন্ত্রণালয়ে তামাকজাত দ্রব্যের নিয়ন্ত্রণের উপর মিটিং হয়েছিল সাদাপাতা কেমন করে ধরা যায় তা বুঝতে পারছি না। সাদা পাতা উৎপাদন হয় অন্য ফসলে সাথে দেয়। আইনের প্রয়োজন আছে কিন্তু সচেতনতা প্রয়োজন। নানান দিক থেকে টার্গেট করতে হবে। তামাক শুধু প্রজনন স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে না সারা অঙ্গ ক্ষতি হয়।

গর্ভবতীর খাওয়ার অরুচী হলে পান খাওয়া বাড়িয়ে দেয়। পান জর্দা খাওয়ার কারণে বিকলাঙ্গ, অপুষ্ট, শিশুর জন্ম হয়। জরায়ুর মুখের ক্যান্সার, লাং ক্যান্সার হয়। তামাক একটি পরিবারকে ধ্বংস করে দেয়। জর্দা,গুলের দাম বাড়ালে তো আরো অর্থকরী হলো। বাউল শিল্পী আলেয়ার গান একটি ম্যাসেস ছিল। বাংলাদেশকে তামাক মুক্ত করার জন্য যুদ্ধ চালিয়ে যেতে হবে। যোদ্ধা হিসেবে আছি থাকবো কাজ করে যান।


তাসমীয়া আফরীন মৌ চলচিত্র নির্মাতা:
সাদা পাতা, জর্দা নিয়ে বেশি জানা ছিল না। বাসনার ছবি দেখলাম আমার বাসার কাজের মেয়ে সেও বলে ভাত খেতে পারি না। যেখানে আমরা কাজ করি সেখানে পান কম ব্যবহার হয়। সিগারেট খুব কমন। সিনেমায় ধূমপান দেখানো হয়। মিসির আলী ১ টা অভ্যাস এবং তার ফল শ্রুতিতে কি হয় তা আছে। সিনেমার ফিকশনে সিগারেট হাতে আছে কিন্তু জ্বালানো হয় না।

দেশের বাইরের একটি ছবিতে মা বাবা সন্তান সবাই সিগারেটে আসক্ত হয়ে যায়। সিগারেট নিভোলো ছবিতে সেটা দেখানো হল। অস্থিরতার মধ্যে আছে। ক্যারেক্টার আচরণগত ব্যাপার আছে। ধোঁয়াবিহীন শুধু পান খাওয়ানো হচ্ছে। পরোক্ষ ভাবে ২টি বিষয় দেখা যায়। দাম বাড়লেও খাওয়া বন্ধ হয়নি। পাবলিক প্লেসে বলা যায় খেতে পারবে না। এটা নাগরিকের স্বাস্থ্য ইসু ১৮ বছরের নীচে শিশুদের দিয়ে বেচা কেনা করানো হচ্ছে রাষ্ট্রকে দায়িত্ব নিতে হবে। শুধু আইন করলে হবে না।


প্রফেসার দিলারা চৌধুরী:
জরায়ু ক্যান্সার, মুখের ক্যান্সার হয় তা আমার জানা আছে। কিন্তু তামাক নিয়ে কোন কাজ করিনি। রাজনৈতিক বিষয়ে লেখালেখি করি। সামাজিক বিষয়ে কেউ লিখলে তাদের লেখা পড়ি। বিদেশে ধূমপান তারা বন্ধ করেছে। বিদেশে জর্দা, সাদাপাতা নাই। ৬০ এর দশকে নারী আন্দোলন কারীরা পুরুষের পাশাপাশি ধূমপান ধরেছিল। আইন আছে প্রয়োগ নাই। UK, USA আইনের প্রয়োগ খুব ভাল। ফিল্মে হলিউড, এ্যাকটর ছবিতে এখন ধূমপান দেখায় না। মহানায়ক উত্তম কুমারের জীবনী নিয়ে সিনেমায় বিশ্বজিৎ ধূমপান করছে। এটা দেখে যুব সমাজ খাচ্ছে। অধ্যাপক ডা. নূরুল ইসলাম তামাক নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে গেছেন। জন সচেতনতা নিয়ে সরকারও কাজ করতে পারে। ধূমপান দারিদ্রতাও একটি কারণ কষ্ট ভুলে থাকার জন্য ধূমপান করে। ইউনিয়ন পর্যায়ে কাজ করি মহিলাদের স্বামী ছেড়ে চলে গেছে ঐসব মাহলারা সন্তান কে মায়ের কাছে রেখে এসে বাসা বাড়িতে কাজ করছে। তারা সারাক্ষণ মুখে গুল ব্যবহার করে। সমস্যার ব্যাপকতার জন্য কাজ করতে হবে। শিক্ষক হিসেবে আমরা জাহাঙ্গীর নগর, ঢাকা বিশ্ববদ্যালয়ের ছাত্রদের সচেতন করতে পারি।


অধ্যাপাক ডা. শারমিন ইয়াসমিন, কমিউনিটি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ:
মেডিকেল স্টুডেন্ট মেয়েরা কোন সমস্যা হলে আমার কাছে আসে। ক্যান্টিনে ছেলেরা ধূমপান করে মেয়েরা বলে এটা আমাদের কাছে ভাল লাগে না। সরকারে নীতিমালা আছে সাইন লাগিয়েছি তারপরও তারা মানে না। কলেজের সামনে সিগারেট বিক্রি করে ব্যাপারটা অধ্যক্ষকে বললাম। ওকে বলার পর সে সিগারেট বিক্রি বন্ধ করে চিপস বিক্রি করে। লোকটি এখন অসুস্থ। রিক্সা ওয়ালার হাতে সিগারেট থাকলে তাকে বললে এখন ফেলে দেয়। বর্তমানে মেয়েরা ধূমপান করে তার চেহারা নষ্ট হয় দাঁত নষ্ট হয়। কাজের মেয়ে আমাকে বলতো আমার বয়স ভাবীর চেয়ে কম কিন্তু আমাকে বুড়া মনে হয়। যোদ্ধা হিসেবে বাবা, মা তার সন্তানকে বলতে পারে। ধোঁয়াবিহীন তামাকের বিষয়টি স্কুল হেলথ প্রোগামে এটা যুক্ত করতে হবে। মেলেনিয়াম ডেভলপমেন্ট গোল-৩ NCD বিষয়ে আছে কিন্তু সেখানে অনেক গ্যাপ আছে তার জন্য কাজ করতে হবে। ছোট ছোট জিনিষ থেকেই অনেক বড় কাজ হয়। প্রতি বছর ১৫ অক্টোবর হাত ধোঁয়া দিবস করি সেখানে তামাকের ক্ষতির দিক নিয়ে বললে ভাল হবে। সাংবাদিকদের অনেক ভূমিকা আছে তারা তামাকের ক্ষতির দিকে নিয়ে লিখতে পারেন। ডাক্তারা ধূমপান করে তারা আবার রোগীকে নিষেধ করে এটা বন্ধ করতে হবে।


রেহেনা সিদ্দিকী, সমাজ কর্মী:
তাবিনাজে আছি থাকবো। জেন্ডার বিষয়ে কাজ করি। বিধবা, স্বামী পরিত্যাক্তা তাদের প্রশিক্ষণ দেই চট্টগ্রামের সীতাকুন্ডে আমাদের কাজ আছে। সরকারী ভাবে সরকার কাজ করবে তার পরও বলবো সরকারকে বললে হবেনা। আমাদের কাজ করতে হবে। আমার প্রশিক্ষণ প্রোগামে আমি ধোঁয়াবিহীন তামাকের বিষয়টি আনতে পারি। আমার প্রশিক্ষনার্থীদের মধ্যে একজন মুখের ক্যান্সারে মারা গেছে । একজন অসুস্থ আছে। তাবিনাজের সহযোদ্ধা হিসেবে থাকবো।


নাজমি সাবিনা, গবেষক:
আমি একজন স্বাস্থ্য গবেষক ঘর থেকে শুরু করতে পারি। আজকাল বাবা ছেলে একসাথে ড্রিং করে। পান, জর্দাকে নেয়া হয় সামাজিক দিক থেকে। মিরপুর ডেন্টাল কলেজে অনেক ক্যান্সার রোগী আসে। জর্দা, গুল, সব ধরণের তামাকদ্রব্য ব্যবহারের কারণে ক্যান্সার হয়। ডেন্টাল কলেজে সচেতনা মূলক কাজ করা যেতে পারে। ভাত খাওয়ার পর পান বা সিগারেট খায়। চিন্তায় থাকার কারনে নেশায় চলে যায়। ক্ষুধা দমন করে। নারীদের নিয়ে কাজ করতে পারি। সচিবালয়ে কর্মকর্তা এবং কর্মচারী পান খায়। তাদের ইস্ক্রিনিং করা যায় ডেন্টাল কলেজ থেকে করতে পারে। এভাবে সচেতন করা যায়।

তামাক বিরোধী নারী জোট তাবিনাজ তাদের সাথে আছি। স্বাস্থ্য হেলথ সিসটেমে কাজ করছি সেই সুত্রে তাবিনাজের সাথে যুক্ত হতে চাই।


রীতা ভৌমিক সাংবাদিক, যুগান্তর:
সিগারেটের ধোঁয়ার কারণে বসুন্ধরার রাস্তায় হাটা যায়না। আমরা ধূমপান না করেও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছি। বাসের ড্রাইভারদের এখনো বন্ধ করা যাচ্ছে না। তারা বলে ধূমপান না করলে ঘুম আসে তখন এ্যাকসিডেন্ট হবে তাই খায়। শুধু লিখে কাজ হবে না। নিজেদের সচেতন হতে হবে।


অধ্যক্ষ ডা.খালেদা খাতুন, বারডেম হাসপাতাল:
সাংবাদিক আপা ড্রাইভারদের কথা বললেন কিন্তু আইনের যারা রক্ষক তারা পুলিশ তারা ধূমপান করছে। ৬ সেকেন্ডের মধ্যে নিকোটিন মস্তিকে পৌঁছে যায়। একবার নিকোটিন শরীরে প্রবেশ করলে বার বার নিতে ইচ্ছা করে। আইন থাকা দরকার কিন্তু যথাযথ প্রয়োগ নাই। মহিলারা বলে ভাত খেতে না পারি কিন্তু পান না খেলে হবে না। পান, জর্দা খেলে ষ্টমাকে নিকোটিন গিয়ে তাদের খাবারের রুচী কমিয়ে দেয়। তামাকজাত দ্রব্য ব্যহারের কারণে অল্প বয়সে বুড়া হয়ে যায়। কারণ নিকোটিন ব্লাড ভেসেলে গিয়ে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করে। রোগীদের অনেক সময় নিয়ে দেখি তাই একজন রোগী দেখতে অনেক সময় লাগে। ক্যান্সার রোগী এত বেড়ে গেছে অনেক বিজ্ঞাপন দেয় ক্যান্সার চিকিৎসার জন্য সাহায্য চাই। চিকিৎসার জন্য আমাদের অনেক টাকা বিদেশ চলে যায়।


সরফুদ্দিন আহমেদ, ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন:
আজকের যে বিষয় তামাকদ্রব্যের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে নারী যোদ্ধাদের ভুমিকা। পরিবার থেকে এটা শুরু হয়। এখানে মায়েদের ভূমিকা অনেক তারা সন্তানদের সচেতন করতে পারেন। পরিবারের ভিতর থেকে সচেতনতা আসে। প্রতিবাদ করলে কিন্তু কাজ হয়। বাসে বসে একজন সিগারেট খাচ্ছেন তার পাশে আরেক জন বলছেন আমি সিগারেটের গন্ধ সহ্য করতে পারি না আপনি এটা ফেলেদেন। সে ফেলে দেয়ার পর দ্বিতীয় জন পান খাচ্ছে তখন সে বললো আমি জর্দার গন্ধ সহ্য করতে পারি না এটার গন্ধে আমার ক্ষতি হচ্ছে। নানী, দাদীরা নাতনীদের পান দেয় ছোট বেলা থেকে যার কারণে সে আস্তে আস্তে আসক্ত হয়ে যায়।


আতাউর রহমান মাসুদ: প্রোগ্রাম অফিসার, ক্যাম্পেন ফর টোবাকো ফ্রি কিডস্ (CTFK)
আমাদের দেশে ৩৫% লোক ধূমপান করে। আমাদের দেশে ধূমপান এর চেয়ে ঝখঞ ধোঁয়াবিহীন তামাক বেশি গ্রহণ করে। গার্মেন্ট নেত্রী সুলতানা বলেছেন শ্রমিকরা পান খায় তাদের কাউন্সিলিং করবেন। আমাদের দেশে আইন আছে আইনের যথাযথ প্রয়োগ নাই। দেবী সিনেমা নিয়ে আলোচিত বিষয়। সবার সামাজিক দায়িত্ব এটা। তামাকজাত দ্রব্য সেবনে নিকোটিনের প্রভাবে পুরো পরিবার ধ্বংস হয়ে যায়। সবাই এই আন্দোলনে শরিক হবার আহ্বান জানাই। প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ তামাক মুক্ত হবে বলে আশা করছেন।


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।