খাদ্য ফসল চাষের দাবিতে বিক্ষুব্ধ কৃষক সমাজের র‌্যালী ও মানববন্ধন


গত ২৩ নভেম্বর ২০১৪, রবিবার, বিকাল ২.৩০ মিনিটে তামাকের বিকল্প ফসল চাষের পক্ষে বিক্ষুব্ধ কৃষকসমাজের আয়োজনে কুষ্টিয়া জেলার মিরপুর উপজেলার সদরপুর ইউনিয়নের বড়বাড়িয়া গ্রামে একটি র‌্যালী ও মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়। তামাকচাষ নিরুৎসাহিতকরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন নীতিমালা না থাকায় বিগত কয়েক দশকে অরক্ষিত কৃষকদের ব্যবহার করে তামাক কোম্পানিগুলো আগ্রাসীভাবে তামাক চাষ বাড়িয়ে চলেছে। ফলে সারা দেশে এই বিষাক্ত ফসলের আবাদ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি সস্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যানুযায়ী দেশে ২০১৩-১৪ মৌসুমে ১০৮,০০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে, ২০১২-১৩ মৌসুমে যা ছিল ৭০,০০০ হেক্টর। অর্থাৎ এক বছরেই তামাক চাষের জমির পরিমাণ বেড়েছে ৩৮,০০০ হেক্টর। সাময়িক মুনাফার প্রলোভনে পরে কৃষক ক্রমশ তামাক চাষে আগ্রহী হয়ে উঠায় খাদ্য ও অর্থকরী ফসলের জমি চলে যাচ্ছে তামাকের দখলে। সরকারের দেওয়া কোটি কোটি টাকার ভর্তূকীকৃত সার ও সেচ সুবিধা ব্যবহার করে বছরের পর বছর মুনাফা লুটে নিচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। একইসাথে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের মাধ্যমে জমির উর্বরাশক্তিও মারাত্মকভাবে হ্রাস করে ফেলছে তারাই। তামাক পোড়ানোর উৎকট গন্ধ ও ধোঁয়ায় চার পাশের পরিবেশ যেমন দূষিত হচ্ছে তেমনি জনজীবনে সৃষ্টি করছে চরম দুর্ভোগ। তামাক চাষ ও প্রক্রিয়াজাতকরণে দীর্ঘসময় যুক্ত থাকার কারণে গোটা কৃষক পরিবারই বছরের অধিকাংশ সময় নানারকম অসুস্থতায় ভোগেন।


২৩ নভেম্বর তামাক র‌্যালী, কুষ্টিয়া


কৃষক ও কৃষি আমাদের গ্রামীণ ও জাতীয় অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এসবে সুরক্ষা প্রদান রাষ্ট্রীয় দ্বায়িত্ব। এ লক্ষে প্রয়োজন কৃষকদের বিকল্প ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করণ ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান। তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ মোকাবেলার বিধান সম্বলিত একটি কার্যকর তামাকচাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নই কেবল কৃষকদের সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তামাক চাষ রুখতে সক্ষম।

এসব বাস্তবতার প্রেক্ষিতে বর্তমান তামাক চাষীসহ বিভিন্ন কৃষক বিক্ষুব্ধ কৃষকসমাজের ব্যানারে খাদ্য ফসল চাষের দাবীতে বড়বাড়িয়া দক্ষিণ পাড়া থেকে শুরু হয়ে বড়বাড়িয়া আমিন বাজার প্রদক্ষিণ করে আবার আমিন বাজার এসে র‌্যালী শেষ হয় এবং সেখানে একটি মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে বিক্ষুব্ধ কৃষকসমাজের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন ভেড়ামারা গ্রামের কৃষক আমিনুল ইসলাম গাইন, নজিবপুর গ্রামের কৃষক মোঃ আব্দুল বারী, আছির উদ্দিন বিষু, বড়বাড়িয়া গ্রামের কৃষক কাজেম মন্ডল, শিউলি আক্তার সদরপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য হাবিবুর রহমান। বক্তারা বলেন, তামাক চাষ আসার পরেই গ্রামের সকল ফলজ গাছ কাটা পড়েছে। চাষীরা যে ফসল ঘরে রেখে খাইতে পারবে না সে ফসল আমরা করবো না। খাদ্য ফসল উৎপাদন করে আমরা অনেক লাভবান হওযা যায়। র‌্যালী ও মানববন্ধনে দেড় শতাধিক জনগণ অংশগ্রহন করেন। এর মধ্যে ছিল কৃষক, ভূক্তভোগী তামাকচাষী, নারী, স্কুলের ছাত্র ছাত্রী এবং শিক্ষক।


২৩ নভেম্বর তামাক র‌্যালী, কুষ্টিয়া


বিক্ষুব্ধ কৃষকসমাজের দাবি:

১. কৃষি এবং কৃষকের উপর সরকারের জোরালো নজরদারী থাকবে।

২. রাষ্ট্রীয়ভাবে কৃষকদের তামাকের বদলে খাদ্য ফসল চাষে উদ্বুদ্ধকরণ ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করতে হবে।

৩. তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ মোকাবেলার বিধান সম্বলিত একটি কার্যকর তামাকচাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।

২৩ নভেম্বর তামাক র‌্যালী, কুষ্টিয়া

২৩ নভেম্বর তামাক র‌্যালী, কুষ্টিয়া


ছাপবার জন্য এখানে ক্লিক করুন



৫০০০ বর্ণের অধিক মন্তব্যে ব্যবহার করবেন না।