‘গোল্ডেন রাইস’ নিয়ে নানা প্রশ্ন তবুও অনুমোদন মিলবে?
ফরিদা আখতার || Friday 06 December 2019 ||গোল্ডেন রাইস নামের ধানবীজের জৈবিক গঠনে বিকৃতি ঘটিয়ে বানানো জেনেটিক্যালি ইঞ্জিনিয়ার্ড ক্রপ (জিএম) ধান কৃষি মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে চাষের জন্য পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চেয়েছে। কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এ বিষয়ে গত ৩০ জানুয়ারি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ‘সরকার শিগগিরই ধানের নতুন জাত গোল্ডেন রাইস উন্মুক্ত করবে (সমকাল, ৩১ জানুয়ারি ২০১৯)।’ এরপর আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা কেন্দ্র ইরির (IRRI) পরিচালক বাংলাদেশে এসেছেন এবং এর অনুমোদন দেয়ার কথা বলেছেন। এ ঘোষণা আরো এসেছে। যেমন ২০১৫ সালে তত্কালীন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী ডেইলি স্টারকে (৯ অক্টোবর, ২০১৫) বলেছিলেন, বাংলাদেশ ধান গবেষণা কেন্দ্রের অনুরোধে ন্যাশনাল টেকনিক্যাল কমিটি অন ক্রপ বায়োটেকনোলজি ২০১৫ সালের ২০ সেপ্টেম্বর মাঠ পর্যায়ে চাষের অনুমোদন দিয়েছে (http://www.thedailystar.net/ frontpage/worlds-first-golden-rice-readz-trial-153676), কিন্তু তা হয়নি। পত্রপত্রিকায় এটাও বলা হয়েছিল, ২০১৭ সালের নভেম্বরে বাংলাদেশ ধান গবেষণা প্রতিষ্ঠান ব্রি পরিবেশ মন্ত্রণালয়কে ডাটা দিয়েছে। বায়োসেফটি প্রটোকলের নিয়ম অনুযায়ী বায়োসেফটি কোর কমিটি এর পরিবেশগত ঝুঁকির বিষয়টি পরীক্ষা করে দেখছে, কারণ এ ধান গাছ নিজেই একটি আগাছা হয়ে উঠতে পারে। ঢাকা ট্রিবিউনে এ তথ্য প্রকাশিত হয়েছে। তাহলে দেখা যাচ্ছে, অনুমোদন পাওয়ার মতো প্রস্তুতি বাংলাদেশের এখনো হয়নি। তাহলে এত তাড়া কিসের?
এখন আবার অনুমোদন দেয়া হবে বলে দেশের পত্রপত্রিকার চেয়ে বেশি সোচ্চার হয়েছে বিদেশের বায়োটেক পত্রিকা, যেমন ‘Science’। তারা বলছে, বাংলাদেশ গোল্ডেন রাইস অনুমোদনের জন্য ‘প্রথম দেশ’ হবে। মনে হচ্ছে, সব বিবেচনার বাইরে গিয়েও অনুমোদন দেয়ার প্রক্রিয়া এগিয়ে যাচ্ছে। এদিকে বাংলাদেশসহ বিশ্বের পরিবেশ সংগঠন ও বিজ্ঞানীরাও এ বিষয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশ সরকারের দিক থেকে এটা বিকৃত বীজ মাঠ পর্যায়ে বা কৃষক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার দ্বিতীয় উদ্যোগ। বিকৃত বেগুনবীজ বা বিটি বেগুন ছাড় দেয়ার পর একের পর এক জিএম ফসল দিয়ে বাংলাদেশের প্রাণবৈচিত্র্যনির্ভর কৃষি ব্যবস্থাকে বহুজাতিক বীজ কোম্পানির স্বার্থে শুধু সর্বনাশের দিকেই ঠেলে দেয়া হচ্ছে না, পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্যকেও চরম হুমকির মুখে ফেলে দেয়া হচ্ছে। ডগা ও ফল ছিদ্রকারী পোকা দমনের কথা বলে ‘বিটি বেগুন’ প্রবর্তনের সময় যেসব দাবি করা হয়েছিল তা সত্য প্রমাণিত হয়নি। এর পক্ষে যেভাবে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পদ্ধতি অনুসরণ এবং বৈজ্ঞানিক প্রমাণ দাখিলের বাধ্যবাধকতা ছিল, তা পালন করা হয়নি। কোম্পানির পক্ষ হয়ে গবেষণা প্রতিবেদন দাখিল করে ভুয়া দাবির ভিত্তিতে এবং ঝুঁকিপূর্ণ বিকৃত বীজ মাঠে প্রবর্তনের ক্ষেত্রে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা না মেনে বিটি বেগুন কৃষকদের ওপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। তদুপরি কৃষকরা এ ফসল চাষ করে লাভবান হননি। তা সত্ত্বেও নতুন আরো একটি জিএম ফসল কেন অনুমোদন দেয়া হচ্ছে, তা গুরুতর প্রশ্ন নিয়ে হাজির হচ্ছে। বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য, কৃষক ও কৃষির স্বার্থ রক্ষার চেয়েও বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থ রক্ষা কি বেশি গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে?
বাংলাদেশ সরকার প্রাণবৈচিত্র্য সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ১৯৯৪ সালে প্রাণবৈচিত্র্য সনদ (সিবিডি) এবং পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও মানবস্বাস্থ্যের ওপর জিএমের বিরূপ প্রতিক্রিয়া নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে আন্তর্জাতিক আইন কার্টাগেনা প্রটোকল অন বায়োসেফটি—সিপিবি (২৪ মে ২০০০) অনুস্বাক্ষর করেছে। সে কারণেই বিটি বেগুন ও গোল্ডেন রাইসের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়কে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুমোদন চাইতে হয়। আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, পরিবেশ মন্ত্রণালয় গোল্ডেন রাইস অনুমোদন দেয়ার আগে কি জনগণকে জানাবে যে, আগে যে বিটি বেগুন অনুমোদন দেয়া হয়েছে তা পরিবেশের ঝুঁকিমুক্ত?
আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ও বহুজাতিক কোম্পানি সিনজেন্টার সহযোগিতায় বাংলাদেশে গোল্ডেন রাইস বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ধান ব্রি-২৯-এর মধ্যে জেনেটিক কারিগরি করে ড্যাফোডিল ফুলের জিন স্থাপন করে প্রথম গোল্ডেন রাইস বা এজ-১ করা হয়েছিল। কিন্তু এই জিএম ধানে যথেষ্ট পরিমাণ বিটা ক্যারোটিন উৎপাদন না হওয়ায় এর সফলতা আসেনি। ফলে ২০০৫ সালে দ্বিতীয় পর্যায়ে ভুট্টা থেকে বিটা ক্যারোটিন ব্রি ধান ২৯-এর মধ্যে ঢুকিয়ে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ করা হয়েছে। ড্যাফোডিল বা ভুট্টা থেকে জিন নেয়ার কারণে ধানের রঙ সোনালি হয় বলেই গোল্ডেন রাইস নাম দেয়া হয়েছে। দ্বিতীয় দফায়ও পুরোপুরি সফল হয়েছে এমন কোনো প্রমাণ নেই। উল্লেখ্য, ব্রি-২৯ বাংলাদেশের পরিবেশ ও কৃষকবান্ধব একটি মূল্যবান জাত। বোরো মৌসুমে সারা দেশে দেশের প্রায় ৩১ শতাংশ জমিতে এ ধান চাষ হয়। অর্থাৎ এ ধানের ক্ষতি হলে কৃষিতে বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
কৃষিমন্ত্রী বলেছেন, এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া ‘গোল্ডেন রাইস নিরাপদ, শরীরের জন্য এতে কোনো ঝুঁকি নেই’ বলে অনুমোদন দিয়েছে। বাংলাদেশের জন্য এ তথ্যের কোনো প্রাসঙ্গিকতা নেই। কারণ এ দেশগুলো ধান উৎপাদনকারী কিংবা ধান ব্যবহারকারী নয়, এ দেশের মূল খাবারও ভাত নয়। অন্যদিকে বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কৃষি, বিশেষ করে ধান উৎপাদনের ওপর নির্ভরশীল এবং এখানকার মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। কাজেই যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় গোল্ডেন রাইস নিরাপদ বলে অনুমোদন দিলে এর সঙ্গে বাংলাদেশের পরিবেশ, প্রাণবৈচিত্র্য ও স্বাস্থ্যের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এখনো কোনো এশিয়ার দেশে গোল্ডেন রাইস ছাড় পায়নি। বিশেষ করে ফিলিপাইনে পরিবেশ আন্দোলনের বিরোধিতায় এ ধান অনুমোদন পায়নি। ফিলিপাইনস হেলথ অ্যালায়েন্স ফর ডেমোক্রেসি (এইচইএডি) এবং ইউপি ম্যানিলা কলেজ অব মেডিসিন বলেছে, কোম্পানির ল্যাবরেটরির বাইরে গোল্ডেন রাইস নিরাপদ, এমন কোনো প্রমাণ এখনো তারা দিতে পারেনি। এ অবস্থায় দেশে এই মুহূর্তে জিএম ধানের মাঠ পর্যায়ে চাষের অনুমোদন দিলে আমাদের ধানের বৈচিত্র্য এবং ধান চাষের ওপর হুমকি সৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সরকারকে তা বিবেচনায় রাখতে হবে। এটা সরকারের বিশেষ দায়িত্ব বলে আমরা মনে করি। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে জিএম ধান তথা জিএম ফসলের নেতিবাচক প্রভাবের বিরুদ্ধে তীব্র জনমত গড়ে উঠেছে অথচ বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থে অনায়াসে অনুমোদন পাওয়া যায় এমন ধারণা তৈরি হয়েছে।
ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ অনেক খাদ্যফসল আমাদের দেশেই আছে। এ বিষয়ে বাংলাদেশ পুষ্টিবিজ্ঞান প্রতিষ্ঠানেও অনেক গবেষণা হয়েছে। অনেক ধরনের শাক যেমন কাঁটানটে, সাজনাপাতা, কলমি, পুঁইশাকসহ আবাদি ও অনাবাদি শাক রয়েছে। সবজির মধ্যে মিষ্টি কুমড়া, ঢেঁড়স, গাজর, ফলের মধ্যে পাকা পেঁপে, বাঙ্গি, কাঁঠাল, আম, কলা, আনারসসহ বিভিন্ন ফলে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ আছে। অর্থাৎ প্রাকৃতিকভাবেই আমাদের ভিটামিন-এ সমৃদ্ধ সবজি ও ফল পর্যাপ্ত পরিমাণে রয়েছে। ঢেঁকিছাঁটা চালের মধ্যেও ভিটামিন ‘এ’ পর্যাপ্ত। তাহলে দরকার আমাদের খাদ্যাভ্যাসকে আরো সচেতন ও সজ্ঞান করা। গোল্ডেন রাইস স্বাভাবিক খাদ্যের তুলনায় ভালো, তার প্রমাণ নেই।
মনে রাখতে হবে গোল্ডেন রাইস বহুজাতিক কোম্পানির পেটেন্ট করা একটি পণ্য। আপাতত তারা হিউম্যানেটারিয়ান প্রকল্প হিসেবে বা অন্ধত্ব দূর করবে এমন মানবিক ভাব দেখাচ্ছে এবং বলা হচ্ছে বিনা পয়সায় পাওয়া যাবে। কিন্তু কতদিন? এভাবে রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদি প্রবর্তনের জন্য বিনা পয়সায় দেয়া হয়েছিল, এখন তা কিনতে গিয়ে কৃষক ঋণগ্রস্ত হচ্ছেন। ঋণ ফেরত দিতে না পেরে আত্মহত্যা করছেন। বিনা পয়সায় দিলেও কোনো ঝুঁকিপূর্ণ ফসল আমরা নেব কেন?
ঝুঁকি আছে বলেই অন্যান্য ধান উৎপাদনকারী দেশ যেমন ফিলিপাইন ও ভারত কোনো অনুমোদন দিচ্ছে না। ধান উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে তারা সতর্কতা অবলম্বন করছে। বাংলাদেশ গোল্ডেন রাইস অনুমোদনের প্রথম দেশ হবে—এতে গর্ব করার কিছু নেই; বরং এটা হাস্যকর বিষয়। অন্য কোনো দেশ গোল্ডেন রাইসকে ‘ভিটামিন-এ’র ঘাটতি পূরণের জন্য সমাধান হিসেবে অনুমোদন দেয়ার মতো যথেষ্ট প্রমাণ পায়নি। বাংলাদেশও পায়নি, তবুও অনুমোদন দিতে যাচ্ছে বলে ঘোষণা দেয়া হচ্ছে। ধান উৎপাদনের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশে জেনেটিক্যালি মডিফাইয়েড ধানের প্রবর্তন করে হাজার হাজার জাতের ধানের জন্য হুমকি সৃষ্টি করা কোনোমতেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। বাংলাদেশে নয়াকৃষি আন্দোলনসহ বিভিন্ন কৃষক সংগঠন ও পরিবেশ সংগঠন এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছে। এ প্রতিবাদ চলবেই। ফিলিপাইনেও পরিবেশ সংগঠনের প্রতিবাদের মুখে সরকার এদিকে এগোচ্ছে না। আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে ‘উন্নয়নের রোল মডেল’ মনে করা হলেও গোল্ডেন রাইসের অনুমোদন তার ভাবমূর্তিকে মারাত্মকভাবে ক্ষতি করবে। মনসান্তো ও সিনজেন্টা জানে তাদের নিজ নিজ জিএম ফসল, যা অন্য দেশে ছাড় দেয় না, বাংলাদেশ তা দিয়ে দেয়। এটা কি আমাদের জন্য সম্মানের?
গোল্ডেন রাইস সম্পর্কে কানাডার সংগঠন কানাডিয়ান বায়োটেকনোলজি অ্যাকশন নেটওয়ার্ক (সিবিএএন) সম্প্রতি একটি তথ্যচিত্র (ফ্যাক্ট শিট) বের করেছে। এতে অনেক প্রয়োজনীয় তথ্য দেয়া আছে। কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, ‘গোল্ডেন রাইস কৃষক পর্যায়ে চাষের যোগ্য নয় এবং মানুষের খাওয়ারও উপযুক্ত হয়ে ওঠেনি। এতে যে বিটা-ক্যারোটিন পাওয়ার কথা, তা অন্যান্য খাদ্য থেকে পাওয়া বিটা ক্যারোটিনের সমপর্যায়ের নয় এবং গুদামজাত করা এবং রান্নার পর তা আরো কমে যায়।’
তথ্যচিত্রে দেখা যায়, ‘একজন প্রাপ্তবয়স্ক নারীকে দিনে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ভিটামিন এ পেতে হলে ২ কেজি থেকে ২০ কেজি গোল্ডেন রাইসের (কতদিন গুদামজাত করা হয়েছে তার ওপর নির্ভর করে) ভাত খেতে হবে। অথচ সবুজ রঙের শাক মাত্র ১০০ গ্রাম অথবা ‘আধা কাপ খেলেই দৈনিক প্রয়োজনীয় ভিটামিন-এ পেতে পারেন।’ গোল্ডেন রাইস হাস্যকর পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এসব তথ্য গোপন করেই অনুমোদন চাওয়া হচ্ছে।
বিটা-ক্যারোটিনের প্রাপ্তি ছাড়াও তথ্যচিত্রে দেখানো হয়েছে, একটি জেনেটিক্যালি মডিফাইয়েড ফসল হিসেবে গোল্ডেন রাইসের সেফটি নিয়ে যথেষ্ট পরীক্ষা করা হয়নি। এর পরিবেশগত ঝুঁকি রয়েছে এবং গোল্ডেন রাইসের দাম অনেক বেশি এবং তার কোনো প্রয়োজন নেই।
তাহলে আমাদের প্রশ্ন হচ্ছে, গোল্ডেন রাইস অনুমোদন দিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিশেষ করে শিশুদের অন্ধত্ব নিয়ে কি তামাশা করা হচ্ছে না?
বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান এবং বিশেষ করে ধান উৎপাদনকারী দেশ। এখানে স্বাভাবিক প্রাণকোষের বিকৃতি ঘটিয়ে তৈরি করা ধান বা জিএম ধানের স্রেফ বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থে অনুপ্রবেশ ঘটানোর কোনো যুক্তি নেই। আমাদের দেশের মানুষের প্রধান খাদ্যফসল ধানের ওপর বিকৃত বীজের এই অনাকাঙ্ক্ষিত ঝুঁকি ও বিপদের বোঝা গ্রহণ করা চরম বোকামি। বিকৃত বীজের হুমকি, ঝুঁকি ও বিপর্যয় মোকাবেলার বৈজ্ঞানিক দক্ষতা ও আইনগত সুরক্ষা আমাদের দেশে নেই। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে বিকৃত বীজ বা জিএমের বিরুদ্ধে নেতিবাচক প্রভাব গড়ে উঠছে, কারণ এ ধরনের প্রযুক্তি একদিকে স্থানীয় ফসলকে দূষিত করছে, অন্যদিকে বীজসহ সামগ্রিক কৃষি ব্যবস্থার ওপর বহুজাতিক কোম্পানির আধিপত্য ও দখলদারি বাড়িয়ে তুলছে। কৃষি ব্যবস্থা যদি কোম্পানির দখলে চলে যায়, তাহলে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্বের জন্য সেটা মারাত্মক হুমকি হয়ে উঠতে পারে।
৩ ডিসেম্বর ২০১৯, দৈনিক বণিক বার্তা-য় প্রকাশীত হয়
আরো দেখুন :
Farida Akhter on Genetically modified Golden Rice
ব্যর্থ বিকৃত বীজ (জিএমও) বিটি বেগুন কৃষকের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে