নারী শ্রম দিচ্ছে কিন্তু শ্রমিক হবার অধিকার পাচ্ছে না
ফরিদা আখতার || Monday 22 February 2016 ||শ্রমিক হিসেবে নারী স্বীকৃত কিনা, তার মজুরী বৈষম্য কেন ঘটছে, বা মুল অর্থনীতিতে নারীর ভুমিকা কি সেটা বারে বারে প্রশ্ন ওঠে, কিন্তু কোন সুরাহা হয় না। কিছুটা পাওনা আদায় করা গেলেও পুরুষ শ্রমিকের সমান বা আন্তর্জাতিক মানের কোন কাঠামোতে নারীকে ধরা হয় না। অথচ নারী সবসময়ই শ্রমজীবী, সেটা বাড়ীর ভেতরে হোক বা বাইরে। নারী জন্মের পর থেকে বুঝতে শেখার অংশ হিসেবে তাকে কম পক্ষে গৃহস্থালি কাজ শিখে রাখতে হয়। নইলে তার যে মূল ঠিকানা, অর্থাৎ শ্বশুর বাড়ী সেখানে ঠাঁই হবে না। সেটাই তার কর্মস্থল। নারী তাই কখনো বেকার নয়। যদিও সে বলে আমি কিছু করি না, সংসার দেখি যেন এটা কাজ নয়। এগুলো পুরণো প্রসংগ, তবুও নারী শ্রমিককে যখন পথে ঘাটে দেখি এবং তার অধিকার প্রতিষ্ঠিত না হবার যে যন্ত্রণা দেখি তখন এই মৌলিক দিকগুলো সামনে চলে আসে। নারীর প্রতি মনোভাব কি আমাদের আদৌ বদলেছে?
আন্তর্জাতিকভাবে নারী অধিকার আন্দোলনের প্রেক্ষাপট নারীর শ্রমের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্যে আগে হয়েছে নাকি নারীর ব্যাক্তি অধিকারের আলোকে হয়েছে এটা খতিয়ে দেখার বিষয়। নারী আন্দোলনের ইতিহাস তার স্বাক্ষ্য দেবে। তবে ‘নারীবাদী’ হওয়ার সাথে শ্রমিক নারীর অধিকার সব সময় গুরুত্ব পায় নি। শ্রমিক নারীর পক্ষে বলার অর্থ সবসময় নারীবাদীতার চরিত্রের মধ্যে পড়ে নি। তার একটি কারণ হচ্ছে নারীবাদী আন্দোলন বা ফেমিনিজম নিয়ে যারা কাজ করেছেন তাঁরা নিজেরা শ্রেণীগতভাবে শ্রমিকের পর্যায়ে পড়েন না। তাঁরা মধ্যবিত্ত শ্রেণীর কিংবা বর্ণের দিক থেকেও শ্রমিক নারী থেকে ভিন্ন। যুক্তরাষ্ট্রে এই পার্থক্য বোঝা গেছে সাদা ও মধ্যবিত্ত নারী বনাম কালো ও শ্রমজীবী নারীদের দাবী-দাওয়া ও সংগ্রামের ধরণের পার্থক্য দেখে। তবে নিঃসন্দেহে ফেমিনিজমের অবদান আছে নারীর ব্যাক্তি অধিকার প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, যার সুফল নারী শ্রমিকও নিতে পারছে। কিন্তু এই সত্য মেনেই আমাদের কথা বলতে হচ্ছে যে নারী শ্রমিকের অধিকারের বিষয়টি এখনও মুল শ্রোতের নারী আন্দোলনের অংশ নয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও দুঃখজনকভাবে এটাই সত্যি।
বাংলাদেশে নারী মুক্তির চিন্তা চেতনায় বেগম রোকেয়াও নারীকে পুরোপুরি শ্রমিক হিসেবে দেখেন নি; তিনি দেখেছেন তাঁর সার্বিক বঞ্চনার অবস্থা, স্ত্রীজাতির অবনতির অবস্থা এবং সেখান থেকে মুক্তির জন্যে নারীকে প্রস্তুত করতে চেয়েছেন। এই দিক থেকেও তাঁর জন্যে নারীকে কেরাণী হোক বা জজ ব্যারিস্টার হোক, কিছু একটা হওয়ার স্বপ্ন তিনি দেখিয়েছেন। বর্তমানে নারীরা সেই কাজটি করছেন সফলভাবেই। সার্বিকভাবে নারীকে কর্মক্ষেত্রে আনার বিষয়টি রোকেয়া কখনোই ভুলে যান নি। সেদিক থেকে বলবো পশ্চিমা নারীবাদের তুলনায় বেগম রোকেয়ার চিন্তা সেই সময়ের প্রেক্ষিতে অগ্রসর ছিল। অবশ্য বেগম রোকেয়ার সময়কালেই বিভিন্ন দেশে ‘সুঁচ কারখানার’ বা পোশাক শিল্পের নারী শ্রমিকরা আট ঘন্টা কাজের দাবীতে রাস্তায় নেমেছিলেন। জানিনা ক্লারা সেৎকিনের চিন্তার সাথে বেগম রোকেয়া জানাজানির কোন সুযোগ ছিল কিনা। না থাকলেও বেগম রোকেয়া সে চিন্তা থেকে দূরে ছিলেন না মোটেও। সরাসরি নারীর কর্মঘন্টা বা মজুরী নিয়ে কথা বললেও নারীর শ্রমিক হওয়ার বিষয়টি তার চিন্তায় ছিল না বলা যাবে না। বেগম রোকেয়া জীবিত থাকাকালীন সময়েই ১৯১৮ সালে আন্তর্জাতিক নারী দিবস ঘোষিত হয়েছিল শ্রমিক নারী আন্দোলনের দাবীর প্রেক্ষিতেই।
বাংলাদেশের নারী শ্রমিক প্রসংগ আলাদাভাবে আলোচনার চেয়ে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে করাই ভাল, কারণ বর্তমানে যেসকল বিষয় নারী শ্রমিকের জন্যে ভাবনা জাগাচ্ছে তার উৎপত্তি এখানে নয়, এর সাথে বিশ্বের অর্থনীতির সম্পর্ক একেবারে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। এর ইতিহাসও আমাদের একটু জানা দরকার।
সত্তুরের দশকে নারী অর্থনীতির আলোচনায় স্থান পেল এই কারণে যে সে সময় সবুজ বিপ্লব বা আধুনিক কৃষিকে কার্যকর করতে হলে নারীকে সম্পৃক্ত করতে হয়েছে। যারা আধুনিক কৃষি প্রবর্তন করেছিলেন তাঁরা খুব ভাল করে জানতেন এই কৃষি ব্যবস্থা নারীকে কর্মহীন করে দেবে। কৃষি কাজে তার যে সরাসরি ভুমিকা ছিল বিশেষ করে বীজ রক্ষা করা, ফসল ঘরে উঠলে মাড়াই থেকে শুরু করে গোলায় ভরা পর্যন্ত নারী প্রচন্ড ব্যস্ত। পরিবারের নারী শ্রমের খুব দরকার ছিল। তাই তার কদরও ছিল। একা কাজ করতে না পারলে এবং ঘরের কাজ করার উপযোগী কন্যা সন্তান না থাকলে পুত্র সন্তানের বিয়ে দেয়ার চিন্তা করেছে অনেক পরিবার। ছেলের বয়স ১৮ বা ১৯ বছর হলেই ১৫ বা ১৬ বছরে মেয়েকে বউ করে এনেছে, কিংবা স্বামী নিজেই দিত্বীয় বিয়ে করে বসেছে। মোট কথা ঘরে নারীর সংখ্যা বাড়াতে হবে। তাই বাল্য বিয়ে ও বহুবিবাহের মতো নারী বিরোধী কাজও হয়েছে অনেক ক্ষেত্রে। যেটা সমর্থনযোগ্য নয়। তারপরও এই কাজ অর্থনৈতিক মুল্যায়নে স্থান পায়নি। কিন্তু তাহলে বলা কি যাবে যে আধুনিক কৃষি নারীকে কর্মহীন করে দিয়ে তাকে মুক্তি দিয়েছে? সোজা উত্তর হচ্ছে, না। বাল্য বিয়ে বা বহু বিবাহও বন্ধ হয় নি। নারীর প্রয়োজন শুধু সন্তান জন্মদানের বাইরে আর কিছু নেই। তাই নারী নির্যাতন বেড়েছে, বেড়েছে নারী পাচারসহ আরো অনেক সমস্যা।সার্বিকভাবে নারীর ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে এইভাবে যে পরিবারের শ্রম দেয়া এবং তার দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত সব তার হাতছাড়া হয়ে গেছে। এই পর্যায়ে এসে আন্তর্জাতিক উন্নয়ন ভাবনায় গ্রামীন নারীর কর্মসংস্থান বা উপার্জন করার ধারণা সৃষ্টি করা হয়। নারী কখনোই বসে ছিল না, নানাভাবে কাজ করেছে, কিন্তু অর্থনৈতিক কাজের পুরুষতান্ত্রিক সংজ্ঞার কারণে নারীর অর্থনৈতিক অবদান মূল্যায়ন হয় নি, সেটা পরিসংখ্যানে আনার চেষ্টাও নাই। এই বিষয়গুলো নিয়ে আজকাল কিছু কথাবার্তা এবং গবেষনা হচ্ছে। নারী উন্নয়নের কাজ যখন থেকে শুরু হোল তখন নতুন ধ্যানধারণা সৃষ্টি করা হোল এই বলে যে নারীকে দৃশ্যমান, একেবার টাকার অংকে দেখা যায় এমন করে উপার্জন করতে হবে। গৃহের ভেতরে নারীর কাজকে জাতীয়ভাবে গুরুত্ব দেয়া এবং অর্থনৈতিক মাপকাঠিতে মাপার চেষ্টা হচ্ছে। কিন্তু জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে নারীর কাজের অবদানকে ধরা হয়নি, এখনো হচ্ছে না। জিডিপিতে নারী এখনো আদার ব্যাপারী হয়েই থাকলো, তার জন্যে জাতীয় অর্থনীতি একটি বড় জাহাজ। খবর রেখে কাজ কি!
কারণ হিসেবে একটি ব্যাখ্যা হচ্ছে নারীর অর্থনৈতিক কাজ তার পরিবারের জন্যে, দেশের জন্যে নয়। নারীর অর্থনৈতিক অবদানের ফলে নিঃসন্দেহে পরিবারের খাদ্য যোগান বাড়ে, স্বাস্থ্য রক্ষা হয়, ছেলে-মেয়েদের পড়াশোনার নিশ্চয়তা হয়, বা সংক্ষেপে বলা যায় পরিবারের এবং সামগ্রিকভাবে সমাজের মৌলিক চাহিদা মেটানো যায়। তবে অর্থনীতির ভাষায় এটা সমাজকল্যাণমুলক কাজ, অর্থনৈতিক কর্মকান্ড হিসেবে গুরুত্ব দেয়ার বিষয় নয়। তারা পুরুষের মতো ‘শ্রমিক’ নয়। তারা মুলশ্রোতের কারখানায় কাজ করে না। কাজেই তাদের কাজের মুল্যায়ন পুরুষের মত ঘন্টা ধরে করার দরকার নেই। তারা উন্নয়নের সাথে যুক্ত, অর্থনীতির সাথে নয়। অর্থনীতি অনেক বড় ব্যাপার। নারীর সাধ্য কি তার কাছে পৌঁছায়! নারীকে খুব সহজে অর্থনীতির বাইরে নিয়ে আসা যায় কারণ তাকে সন্তান উৎপাদন করতে হয় এবং লালন-পালন করতে গিয়ে কর্মজীবনের কয়েকটি বছর হারাতে হয়। নারী শ্রমিক হলেই মাতৃত্বকালীন ছুটির প্রশ্ন ওঠে। এটা সমস্যা। বিবাহিত পুরুষ শ্রমিককে সেই কাজের জন্যে সময় দিতে হয় না। নারীকে শ্রমিক হিসেবে বৈষম্য জায়েজ করার এটা একটা বড় যুক্তি হিসেবে আনা হয়।
নারীর কাজের কারণে নারীর নিজের জীবনেও কি ধরণের পরিবর্তন এসেছে তাও দেখা হয়েছে। কারণ শ্রমের সাথে শরীরের সম্পর্ক। শ্রমিকের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে তার শারীরিকভাবে কাজ করতে পারার যোগ্যতা। এখানে মাথার চেয়েও বেশি প্রয়োজন হাত-পা ঠিক থাকা। সেও মেশিনের মতোই, একটি জীবন্ত মেশিন।
এই প্রসঙ্গে বলা প্রয়োজন নারীর শরীর বিশ্ব অর্থনীতিতে আরও একটি কারণে গুরুত্বপুর্ণ, সেটা হচ্ছে তার প্রজনন ক্ষমতা। আধুনিক কৃষি প্রবর্তনের পাশাপাশি উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে পরিবার পরিকল্পনার নামে জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির বিতরণ করে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ একটি আন্তর্জাতিক কর্মসুচির অংশ হয়েছে। গরিব দেশের মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, তাই ধনি দেশগুলো উদ্বিগ্ন। জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কর্মসুচি কি করে সফল করা যাবে তার একটি যুক্তিসংগত পথ হিশেবে নারীর অর্থনৈতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করার তত্ত্ব দেয়া হয়েছিল ১৯৭৪ সালে বিশ্ব জনসংখ্যা সম্মেলনে। এরই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালে মেক্সিকোতে অনুষ্ঠিত বিশ্ব নারী সম্মেলন, বিশ্ব শ্রম সংস্থা (আইএলও) শ্রম বিভাগ সম্মেলন (১৯৭৬) সহ নানা ধরণের সম্মেলনে নারীকে অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। এরই মধ্যে বিশ্বায়নের কারণে তৃতীয় বিশ্বের বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশের নারীদের সস্তা শ্রম হিসেবে নিয়োগের চাহিদা বেড়েছে। তার প্রধান উদাহরণ তৈরী পোশাক শিল্প, যার মুল উপকরণ হচ্ছে সস্তা শ্রম। এর আগে আরও একটি শিল্প রপ্তানীমুখী হবার কারণে সস্তা শ্রম হিশেবে নারীদের ব্যবহার করেছে এবং এখনো করছ সেটা হচ্ছে চিংড়ি রপ্তানী।
যে কোন শিল্পেই নারী শ্রমিক নিয়োগ হয় প্রধানত পুরুষের তুলনায় সস্তায় পাওয়া যায় বলে এবং যেহেতু এই নারীদের সামনে কাজের অনেক ক্ষেত্র খোলা নেই। কৃষি ও শিল্পখাতে নারী শ্রমিক সংখ্যা গত শতাব্দির আশির দশকে লক্ষ্য করা গেছে। এই সময় গার্মেট শিল্পও প্রসার লাভ করতে শুরু করেছে, নারী শ্রমিকের সংখ্যা হয়েছে ৮.২% এবং কৃষিতে নারীর কাজের সংজ্ঞার পরিবর্তনের কারণে হয়েছে ৫৮ শতাংশ। কারণ কৃষি কাজের পাশাপাশি গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি পালন ও এখন কাজ হিসেবে ধরা হয়েছে।
গার্মেন্ট শ্রমিকের কথায় আসা যাক, কারণ গার্মেন্ট শিল্পে নারীদের যোগদান যেমন নারীদের শ্রমিক হিসেবে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে সমাজের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে, তেমনি শ্রমিক হিসেবে শোষণ নির্যাতন কতভাবে সইতে হ্য় তাও দেখিয়ে দিয়েছে। এর সাথে বিশ্ব বাজারের সম্পর্ক একেবারে সরাসরি। শ্রমিকের বেতন বাড়ালে মালিকের মুনাফা কমে যায় এবং বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না। প্রায় ৫ হাজার পোশাক কারখানার মধ্যে অনেক কারখানায় ন্যূনতম মজুরী কাঠামো এখনও বাস্তবায়ন করা হচ্ছে না। দীর্ঘ শ্রমিক আন্দোলনের পরে ২০১৩ সালের ৪ নভেম্বর শ্রমিকদের নিম্নতম মজুরী পাঁচ হাজার ৩০০ টাকা নির্ধারিত হয়। ঘোষিত মজুরী অনুযায়ী প্রথম গ্রেড ৮ হাজার ৫০০ টাকা। দ্বিতীয় গ্রেড ৭ হাজার টাকা। তৃতীয় গ্রেড ৪ হাজার ৭৫ টাকা। চতুর্থ গ্রেড ৩ হাজার ৮০০ টাকা। পঞ্চম গ্রেড ৩ হাজার ৫০০ শত ৩০ টাকা। ষষ্ঠ গ্রেড ৩২ শো ৭০ টাকা এবং সপ্তম গ্রেড ৩ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। অধিকাংশ কারখানায় ৭ম গ্রেড ছাড়া অন্য কোন গ্রেড অনুসরণ করা হচ্ছে না। একটি টক শোতে একজন গার্মেন্ট মালিক সমিতির কর্তাব্যাক্তি বলে বস্লেন বেতন বাড়ালে শিল্প টিকবে না, আর শিল না থাকলে এই নারীদের ‘চাকরানী’ হয়ে থাকতে হবে। এই হচ্ছে নারী শ্রমিকের প্রতি দৃষ্টি ভঙ্গি। শ্রমিকদের ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেয়া হয়নি। বিশেষ করে ইপিজেড-এ কোন ট্রেড ইউনিয়ন করা যাবে না। অন্যদিকে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা না গেলে যুক্তরাষ্ট্রে জিএসপি সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাংলাদেশ। পোশাক শিল্পের মালিকেরা ট্রেড ইউনিয়নকে শিল্পের জন্য ক্ষতিকর মনে করেন। এখন পর্যন্ত ৪ হাজারেরও বেশী প্রতিষ্ঠান ট্রেড ইউনিয়নের বাইরে রয়েছে বলা হচ্ছে।
গার্মেন্ট শিল্প জাতীয় অর্থনীতিতে বিরাট ভুমিকা রাখলেও শ্রমিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ হচ্ছে খুবই কম। বড় বড় কয়েকটি দুর্ঘটনা হয়ে যাবার পর বিশ্বের ধনি দেশের ক্রেতাদের সংগঠন অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স কাজের পরিবেশ নিয়ে উৎকন্ঠা প্রকাশ করেছে এবং নিজেরাই তদারকী করে যাচ্ছে। এটা দেশের জন্যে ভাল নয়, কিন্তু গার্মেন্ট শিল্পের মালিকরা তাদের কথা শুনে কিন্তু শ্রমিকের দাবী মানে না। সম্প্রতি ইপিজেড অঞ্চলে শ্রমিকদের জন্যে শ্রমিক কল্যাণ সংস্থা করার প্রস্তাব মন্ত্রী পরিষদ সভায় অনুমোদন পেয়েছে। এই সংস্থা শ্রমিকের সমস্যা সমাধান করবে কিন্তু তাকে শ্রমিক হিসেবে নিজের দাবী তোলার বা সংগঠিত ভাবে কাজ করার জন্যে ট্রেড ইউনিয়ন করার অধিকার দেবে না। বোঝাই যাচ্ছে, শ্রমিকের স্বার্থ রক্ষার জন্যে এই সংগঠন করা হচ্ছে না।
অন্যদিকে নারী শ্রমিকের প্রজনন ক্ষমতার ওপর সরাসরি হস্তক্ষেপের উদ্যোগ নিচ্ছে পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ, তাদের উন্নত প্রজনন সেবা দেয়ার নাম করে। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি, বিজিএমইএ ভবনে শ্রমিকদের উন্নত প্রজনন সেবা বিষয়ে সরকারের পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ও এনজেন্ডারড হেলথ বাংলাদেশ (ইএইচবি) নামের একটি সংস্থার সঙ্গে বিজিএমইএর একটি চুক্তি হয়।এই চুক্তি অনুযায়ি পোশাক শিল্পে কর্মরত নারী শ্রমিকদের জন্য উন্নত পরিবার পরিকল্পনা, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং সরাসরি পরিবার পরিকল্পনা উপকরণাদি পাওয়া সহজলভ্য করা হবে। প্রায় ৭০% নারী শ্রমিকের সংগঠনের সাথে এই চুক্তির সুফল কি নারী শ্রমিক পাবে নাকি তাকে সন্তান জন্মদান থেকে বিরত রেখে মালিক পক্ষকে সহায়তা করা হচ্ছে। এই নারীদের নিজের ইচ্ছায় পদ্ধ্বতি গ্রহণ সম্ভব হবে কিনা সেটা প্রশ্নবোধক থেকে যাচ্ছে কারণ চুক্তি হচ্ছে বিজিএমইএ-র সাথে কোন শ্রমিক সংগঠনের সাথে নয়।
নারী শ্রমিক শুধু শ্রম বিক্রি করছে না, তার শরীরের নিয়ন্ত্রণও হারাচ্ছে।