কুড়িয়ে পাওয়া খাবার খেয়ে জীবনের পরিবর্তন (২)
রোকেয়া বেগম || Sunday 04 June 2017 ||আছিয়া বেওয়া: টাঙ্গাইল জেলার দেলদুয়ার থানার আটিয়া ইউনিয়নের কান্দাপাড়া গ্রামের আছিয়া বেওয়ার বাড়ি। বয়স ৫৬ বছর। স্বামী মৃত লাল মিয়া। পরিবারে সদস্য সংখ্যা ৫ জন। ২০ বছর আগে স্বামী মারা গেছে। স্বামী মারা যাওয়ার আগে বেশ কিছু দিন অসুস্থ্য ছিল কোন কাজ করতে পারে নি। দীর্ঘদিন তার চিকিৎসা করতে হয়েছে। তখন ছেলে কাজ করতে পারতো না। ঐ সময় অনেক টাকা ঋণ হয়েছিল, ছেলে তাঁতের কাজ করে সে কিস্তি দিয়েছে। ঋণের টাকা শোধ হয়েছে । আর আছিয়া বেওয়া নিজে কাজ করে নানা ভাবে সংসার চালাতেন। এখন ছেলেদের সাথে থাকেন। স্বামী মারা যাওয়ার সময় তিন ছেলে ও এক মেয়ে রেখে গেছে। বড় মেয়েকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলেকে ৪র্থ শ্রেণী পর্যন্ত পড়িয়েছেন টাকার অভাবে আর পড়াতে পারেনি। বড় ছেলেকে চাকুরির জন্য সৗদি আরব পাঠিয়েছেন। বিদেশ পাঠানোর সময় ২ লাখ ৩০,০০০ হাজার টাকা ঋণ করতে হয়েছে। চাচাতো ভাইয়েরা জমি বন্ধক রেখে বিদেশ পাঠিয়েছে। ঐ টাকা ছেলে কাজ করে শোধ করে দিয়েছে। ছেলে মাকে ঋণ করতে নিষেধ করেছে। মেঝ ছেলে রিক্সা চালায়। ছোট ছেলে তাঁতের কাজ করে। চকে কোন জমি নাই। ১০ শতাংশ জমির উপর আগে একটি ঝাপড়া ঘর ছিল। এখন বাড়িতে দুইট টিনের ঘর করেছে। একটি দুই রুমের চার চালা ঘর। একটি দুচালা ঘর। এখন ছাপড়া ঘরে গরু থাকে। ২ টি গরু একটি ছোট বাছুর আছে। বসত বাড়িতে বিভিন্ন গাছপালা আছে। বাড়িতে তরকারি গাছও আছে।
নারিকেল গাছ ১টি । আগে ১৫টি আম গাছ ছিল অভাবের কারণে সব বিক্রি করে দিয়েছেন। এখন ২ টি আম গাছ আছে। পিতরাজ গাছ ছিল ২টা বিক্রি করে দিয়েছেন। বাঁশ ঝাড় ছিল ২টা বিক্রি করে দিয়েছেন।
তরকারি গাছের মধ্যে চিনতন, কুমড়া, দুমরা গাছ বুনেছেন। গাছে তরকারি ধরছে। বর্তমানে হাঁস আছে ৫টি মুরগী আছে ১ টি ।
পরিবারে তারা চার জন সদস্য দু’বেলা রান্না করে খায়। ভাত তিনবেলা খায়। মাঝে মধ্যে মুড়ি খান। আছিয়া বেওয়া তার বার মাসের হিসাব বলতে গিয়ে প্রথম মাস শুরু করেন জ্যৈষ্ঠ মাস থেকে।
জ্যৈষ্ঠ মাস: বাড়ির আশে পাশে দোপা জমি তাতে এ মাসে পানি থাকে। এর মধ্যে কলমি, হেঞ্চি, হেলেঞ্চা এসব শাক পাওয়া যায়, তা খাই। কচুর লতি তুলে খাই, ঢেঁকি শাক, কস্তুরী, পাট শাক, বন পুঁই এসব শাক নিজেরা খেয়ে থাকি এর পাশাপাশি বাড়ির গাছের তরকারিও খেয়ে থাকি। বাড়িতে অল্প তরকারি তা বিক্রি করি না।
ঢেঁকি শাক, কলমি এসব শাক তুলে বিক্রি করে থাকি। আবার কচুর লতি তুলেও বিক্রি করে থাকি তা দিয়ে তেল, লবণ, পেঁয়াজ, রসুন মাথার তেল সব কিনতে হয়। হাঁসের জন্য চক থেকে শামুক খুটে এনে খাওয়ায়। হাঁসের ডিম বিক্রি করে কেরোসিন, নারিকেল তেল ও পান সুপারী, সাদা পাতা এনে খেয়ে থাকি। এ মাসে ইরি ধান কাটে সে ক্ষেত থেকে ইরি ধান খুটে এনে সিদ্ধ করে শুকিয়ে চাল করে ভাত খান। এ মাসে ধান খুটে যা পেয়েছন তার চাল দু’ মাস ভাল ভাবে খেতে পারবে। এ মাসে ডিম বিক্রি করে কিছু টাকা হাতে জমাতে পারেন। এ মাসে খেতে কষ্ট হয় না। জ্বালানীর জন্য এ ধানের চিটা, গাছের পাতা ও খড় এনে জ্বাল দেয়। বাড়ির গাছের আম খেয়েছে।
আষাঢ় মাস: এ মাসে শাপলা, শালুক, কলমি, ঢেঁকি শাক, হেঞ্চি, হেলেঞ্চা, কচু, লতি এসব তুলে খেয়ে থাকেন। ছোট ছেলে চালা নিয়ে চক থেকে মাছ ধরে আনে। মাছের মধ্যে মলা, চান্দা, খৈলসা, ইচা, টাকি পায়। হাঁসের জন্য শামুক খুটে আনে। এ মাসে খুটে আনা ধানের ভাত খাব। কার্তিক অগ্রহায়ণ মাসে নাড়া খুটে আনি তা পালা দিয়ে রেখে দেয়া হয়। নাড়ার পালা বিক্রি করে এক হাজার টাকা পান। এ টাকা দিয়ে সংসারের অন্যান্য খরচ চালান। আবার টাকা হাতে রেখে দেন। কলমি শাক, ঢেঁকি শাক, শাপলা তুলে বিক্রি করেন। এ দিয়ে হলুদ, সরিষার তেল, লবণ, মরিচ ও পেঁয়াজ কিনবে। হাতের টাকা দিয়ে কেরোসিন কিনবে, ধনী মহিলাদের মাথায় তেল দিতে ডাকে, তাদের মাথায় তেল দিয়ে দিলে সে তেল মাখার জন্য দেয়। এ তেলে তার সারা মাস যাবে। আর তেল কিনবে না। বাড়ির গাছের তরকারি খাবে। রোজার মাসের জন্য নিজে বাড়িতে মুড়ি ভেজে রাখেন, ছোলা বাজার থেকে কিনে তাই খাবে। বয়লারের মুরগী বেশি খান। কোরবানীর সময় সমাজে যে মাংস পায় তাই খান। গরুর মাংস কিনে খেতে পারে না।
শ্রাবণ মাস: এ মাসে শাপলা, শালুক, কলমি শাক, ঢেঁকি শাক, হেঞ্চি, হেলেঞ্চা, কচু, লতি, চিনতন, দুরমা, লাউ শাক এসব শাক কুড়িয়ে খাবে। শালুক খুটে এনে সিদ্ধ করে বা পুড়ে দুপুরে খান। অনেক দিন শেষ বেলায়ও খেয়ে থাকেন। খুটে আনা ধানের ভাত ও চাল খায় আবার কিনেও খায়। শামুক খুটে এনে হাঁসের জন্য, আবার শামুক খুটে এনে গর্ত করে রেখে দেয়। শাপলা, কলমি শাক তুলে বাজারে নিয়ে বিক্রি করে হলুদ, লবণ কিনবে। ডিম বিক্রি করে সাবান, নারিকেল তেল কিনবে। আবার শাপলা, কলমি বিক্রি করে মরিচ, তেল, পেঁয়াজ কিনবে। অনেক সময় হলুদ, পেঁয়াজ না থাকলে অন্যের বাড়ি থেকে ধার করে আনেন।
ছোট মাছ: মাঝে মাঝে বরশিতে দু’ একটা বড় মাছ উঠে, তা নিজেরা খান। মলা, ঢেলা, খৈলসা, পুঁটি, টেংরা, শোল, টাকি, নুরা এসব মাছ খেয়ে থাকি। আগের মত মাছ পাওয়া যায় না মাঝে মাঝে কিনে খেতে হয়।
রোদ দেখে গোবর খুটে এনে ঘসি ভেঙ্গে শুকিয়ে রাখছি। আবার কার্তিক মাস থেকে চৈত্র, বৈশাখ মাস পর্যন্ত গোবর খুটে ঘসি দেই তা জরো করে রেখে শ্রাবণ মাসে যখন খড়ির অভাব হয় তখন বিক্রি করেন।
ছেলে তাঁতের কাজ করে হয়তো দু’একদিন আম কিনে নিবে তা বাচ্চাদের নিয়ে খাব। পাশের বাড়ি অনেক কাঁঠাল তার থেকে বাচ্চাদের জন্য কাঁঠাল দেয় তা খায়। পাশের বাড়িতে পেয়ারা, কামরাঙ্গা গাছ আছে চাইলৈ তারা দেয়।
ভাদ্র মাস: হেলেঞ্চা, ঢেঁকি শাক, কচুর শাক, পানার ফুল, পিপুল পাতা, তেলাকুচা, চিনতন, দুমরা, শাপলা, কলমি, শালুক কুড়িয়ে এনে খাবো। আগের মত খাবারে কষ্ট করতে হয় না । তিন বেলা পেট ভরে ভাত খেতে পারি টাকা জমাতে পারিনা খেয়ে দেয় সমান থাকে। আগে অন্যের বাড়িতে কাজ করতাম। এখন অন্যের বাড়িতে কাজ করিনা। ছেলেরা মাছ মেরে আনে টেংরা, রাঘা, টাকি, কৈ, খৈলসা, বাইম, ভূতকইয়া এসব মাছ মেরে আনে তা খাবে। আবার বরশি দিয়ে শোল, টাকি, মাগুর, শিং, নুরা এসব মাছ খাব। বাড়ির তরকারি নিজেরা খায়।
এ মাসে শাপলা, শালুক, কলমি শাক, ষুশনি শাক কমে গেছে অঅগে শাক তুল বিক্রি করতাম এখন নিজরা খাই। ডিম বিক্রি করে সাবান ও হলুদ, পেঁয়াজ কিনবে। টাকা না হলে মাঝে মাঝে হলুদ ও পেঁয়াজ খাবে না। রসুন কিনে খেতে পারে না। তাই রসুন ছাড়া রান্না করেন। ডিম বিক্রি করেও বাজার সদাই করেন। ভাদ্র মাসে আউশ ধান কাটে তা মলন দিয়ে দেই তাতে ভাত খেতে দেয়। অনেক সময় এক বেলা বাচ্চাদের নিয়ে ভাত খাওয়ার চালও দেয়।
আশ্বিন মাস: এ মাসে নতুন ন্যাটাপেটা শাক হবে তার সাথে বন পুঁই, বাজরা কাটা, খুইরা কাটা, চাট কলমি, লতা কলমি শাক তুলে খেয়ে থাকি। আবার বাড়ির গাছের চিনতন, দুরমা শাক খেয়ে থাকি। তেলাকুচা পাতা, পিপুল পাতা পচা মাছে দিয়ে রান্না করি। তেলাকুচা পাতার মরিচ বাটা খাই। শাপলা, শালুক খুটে খাবে। মাছের মধ্যে মলা, ডেলা, পুঁটি, খৈলসা, কৈ বাচ্চা, ভূত কইয়া, বাইম, টাকি, বাঘা এসব মাছ চক থেকে মেরে আনে তা খাই। শামুক খুটে এনে অন্যের বাড়ি দিলে টাকা ও চাল এনে থাকি তা হয়তো এক বেলা খাব। শামুক কুড়িয়ে এনে হাঁসকে খাওয়াবে হাঁসের ডিম বিক্রি করে বাজার করে, তেল, লবণ, মরিচ, পেঁয়াজ, হলুদ কিনে আনবে। এ মাসে বাচ্চারা জলপাই অন্যের বাড়ি থেকে খুটে এনে খাবে। ঢ্যাপ এনে সিদ্ধ ও শুকনা করে চাল বের করে। ঢ্যাপের চালের খই বানায়ে মোয়া খাবে।
কার্তিক মাস: এ মাসে শীত শুরু হয় এবং নতুন শাক পাতা পাওয়া যায়। দুধ কলমি, দন্ডকলস, ন্যাটাপেটা, মোরগ শাক, শুশনী শাক, খুইরা কাটা এসব শাক তুলে খাবো। দন্ডকলস শাকে মরিচ বাটা ও ভাতে সিদ্ধ করে ভর্তা করে খাব। হাঁসের শামুক খুটে আনে। শালুক ও ঢ্যাপ খুটে আনে শালুক সিদ্ধ করে খায়। ঢ্যাপের খই করে গুড় দিয়ে পাক দিয়ে খায়। আমন ধানের ক্ষেত থেকে ঝরা ধান কুড়িয়ে আনবে। আবার আমন ধান কাটার পর ধান কুড়িয়ে আনবো। এ ধানের চাল তৈরী করে খাবে। এখন কারো বাড়ির ঘরের ডুয়া বান্ধি না। এভাবে কাজ করে কাপড় পাই। চক থেকে নাড়া এনে পালা দিয়ে রাখি রান্না করার জন্য। মাঝে মাঝে বিক্রি ও করি। হাঁসের জন্য শামুক খুটে আনবে। হাঁসের ডিম বিক্রি করে সাবান, তেল, লবণ, মরিচ, হলুদ এসব কিনে খাবে।
অগ্রহায়ণ মাস: এ মাসে প্রচুর শাক পাতা পাওয়া যায়। বতুয়া শাক, হেঞ্চি, ন্যাটাপেটা, খ্যাতাপেটা, শুশনী, লাউ শাক, মিষ্টি কুমড়া শাক, দ- কলস, তেলাকুচা পাতা, সাজনা পাতা, বতুয়া শাক তুলে এন রান্না করেন। এ মাসে হাঁস মুরগীকে খাবার দিতে হয় না। হাঁস, মুরগী ধান খুটে খায়। তবে অন্যের বাড়ি চাল ঝেরে কুড়া আনলে তা হাঁস, মুরগীকে খাওয়ান। আবার এ মাসে চকের থেকে আমন ধান কাটার পর সে ক্ষেত থেকে আমন ধান খুটে আনেন। চকে ইঁদুরের গর্ত থেকেও ধান খুটে আনেন। এ ধানের ভাত খাবো, আলু খুটে এনে খেয়ে থাকে।
হাঁসের ডিম বিক্রি করলে লবণ, তেল কিনে। পেঁয়াজ না থাকলে পেঁয়াজ ছাড়াই তরকারি রান্না করেন। অন্যের বাড়িতে একজনকে মাথায় তেল দিয়ে দেই সে হয়তো এক কোষ তেল দেয় তা দিলে আর সারা মাসে তেল দেই না। ছেলে তাঁতের কাজ করে সে এ মাসে সাবান কিনে দিবে। আর কেরোসিন কিনে দিয়েছে।
চকের থেকে নাড়া ও ধানের মোতা খুটে এনে পালা দিয়ে রেখে দেই অন্য মাসে চুলায় জ্বাল দেয়ার জন্য। এ মাসে বাচ্চারা জলপাই কুড়িয়ে খাবে।
পৌষ মাস: এ মাসে বতুয়া ও আলু শাক, দ- কলস, তেলাকুচা, সাজনা, কচু শাক, থানকুনি, পানার ফুল, খেসারী, মটর শাক, খারকন পাতা এসব শাক নিজেরা খাই আবার বিক্রিও করে থাকি। খেসারী শাক, মটর শাক, বতুয়া শাক তুলে বাজারে দিলে ছেলে বিক্রি করে পেঁয়াজ, কিছু রসুন, তেল, লবণ ও মরিচ কিনবো। ইরি ধান আসার পর থেকে কৃষক এখন আগের মত আলু চাষ করে না। রোজার সময় ফেতরার টাকা দিত এখন আর দেয় না । ছেলেরা আমার জামা কাপড় দেয় । ছোট ছেলে তাঁতের কাজ করে। বড় ছেলে বিদেশ গেছে টাকা পাঠায় টাকা জমায়ে ঈদের কাপড় চোপড় কেনা হয়।।
মাঘ মাস: এ মাসে বতুয়া, খেসারী, মটর, দন্ডকলস, সাজনা, ন্যাটাপেটা, পেঁয়াজ পাতা, রসুন পাতা, কচুরমুখী এসব শাক পাতা তুলে খাই। আবার কচুরমুখী তুলে বাজারে বিক্রি করে ঘরে বাজার সদায় করে খাই। হাঁস মুরগী আছে তার ডিম বিক্রি করেও বাজার করি। তেল, লবণ, মরিচ কিনে খাই। নিজেরাও দু’একদিন ডিম খেয়ে থাকি। শুকনা ক্ষেতে হাল দেয়া হয় সে জমিতে ঘেচু ও হালু পাওয়া যায় তা খুটে খেয়ে থাকি। হাঁসের জন্য এ ক্ষেতে থেকে শামুক খুটে এনেও খাওয়ানো হয়। ডালের পরিবর্তে কচুরমুখী ডাল রান্না করে খেয়ে থাকি। লাউ পাতা ও কুমড়া পাতা খেয়ে থাকি। এ মাসে পেঁয়াজ, রসুন কিনে খাব না। পেঁয়াজ, রসুনের পাতা খুটে খেয়ে থাকব। সরিষা মারার কাজ করে ভুষি, আম, কাঁঠালের পাত, খেসারীর ভুষিও কুড়িয়ে এনে পালা দিয়ে রেখে দেন রান্না করার জন্য।
ফাল্গুন মাস: এ মাসে লাউ শাক, কুমড়া শাক, খুইরা কাটা, ন্যাটাপেটা, রসুন শাক, চাট কলমি, কচুরমুখী, গিমা শাক, মোরগ শাক ও মরিচ পাতা শাক তুলে ভাজি, ভর্তা ও ঘন্টো রান্না করে খেয়ে থাকি। কচুরমুখীর ডাল ও ভর্তা করে তারপর তরকারি রান্না করে খেয়ে থাকি। সব শাক একসাথে করে ভাজি খেয়ে থাকি। গম খুটে এনে রুটি বা গম ভাজি খেয়েও দু’এক বেলা থাকি। গমের ডাটি কেটে এনে জ্বাল দেই। অন্যের বাড়ি কাজ করে দিয়ে হাঁস মুরগীর জন্য কুড়া চেয়ে এনে থাকি ও তা হাঁস মুরগীরে খাওয়াই। ডিম পাড়ে তা বিক্রি করে কিছু বাজার খাই আবার পান কিনেও খাই, সুপারীর গাছ নিজের বাড়িতে আছে। গমের ডাটি এনে ঘরের বেড়া দিয়ে থাকি। গমের ভুষি এনে জ্বাল দিয়ে থাকি। ডাটি আটি বেঁধে রেখে দেই পরে বিক্রি করার জন্য। পাকা বড়ই ফুরিয়ে আসে তখনও বাচ্চারা দু’ একটা খুটে খায়।
চৈত্র মাস: আগে এ মাসে কৃষকের খেসারী, মসরী ডাল তুলে দিতো এখন তুলে না। ডাল ভাঙ্গার কাজ করে দিলে এক বেলা ডাল খেতে দেয় তা এ মাসে খেয়েও অন্য মাসে খেতে পারেন। আবার শাক পাতার মধ্যে এ মাসে গিমা শাক আলুর সাথে ভাজি করে খাওয়া হয়। এতে গরমে পেট ভাল থাকে। আবার পুরানো গাছের লাউ পাতা, কুমড়া পাত ভাতে সিদ্ধ দিয়ে ভর্তা খাওয়া হয়। হাল বাওয়া ক্ষেতের থেকে হালু, ঘেচু ও শামুক খুটে আনেন। শামুক খুটে এনে হাঁসকে খাওয়াবো। এ সময় হাঁসের খাদ্যের অভাব তাই শামুক খুটে এনে গর্তে পানি দিয়ে রাখেন সেই শামুক খাওয়ান। খেসারী ও মটর কলাইর ভুষি কুড়িয়ে এনে রেখে দেয় তা বর্ষা মাসে চুলায় জ্বাল দেয়। অন্যের ক্ষেতে মিষ্টি আলু তোলার পর ক্ষেত থেকে মিষ্টি আলু কুড়িয়ে এনে তার তরকারি খেয়েছি। আবার আলু সিদ্ধ করে খেয়ে থাকি। গাছের পাতাসহ বিভিন্ন জাবা কুড়িয়ে এনে জ্বাল দিব। এ মাসে বার মাসের কামরাঙ্গা পাওয়া যায় তা দু’ একটা কুড়িয়ে এনে খায়।
বৈশাখ মাস: তেলাকুচা, হেঞ্চি, কচু পাতা, সাজনা পাতা, ন্যাটাপেটা, গিমা, খুইরা কাটা এসব শাক খেয়ে থাকি এর পাশাপাশি বাড়িতে তরকারি গাছের দু’একটা তরকারি ছিল তা মাঝে মধ্যে খেয়েছি। বাজার থেকেও মাঝে মধ্যে সবজি কিনে খেয়েছি। এ সময় খালে বিলে পানি থাকেনা ছোট মাছ ও পাওয়া যায় না। তাই মাছ ও কিনে খেতে হয়। রান্নার জন্য বিভিন্ন গাছের পাতা, বাঁশ পাতাসহ বিভিন্ন জঙ্গল কেটে শুকিয়ে রান্না করি। আর ঘরে রাখা বিভিন্ন জ্বালানী রেখে দেই তা বর্ষা মাসে জ্বাল দিবো আবার বিক্রি করবো। এ সময় খড়ির দামও বেশি থাকে।