শুধু আমন ধান নয়, অতি তাপে শিম চাষও ব্যহত হয়েছে
আজমিরা খাতুন || Saturday 14 September 2019 ||ঈশ্বরদী উপজেলার পাড়াসিধাই গ্রামে নয়াকৃষি কৃষক সালেহার বাড়িতে অনুষ্ঠিত কৃষকদের সভায় এবারের শিমের চাষ কেমন হয়েছে আলোচনা করা হয়। কৃষক যে কোন একটি ফসলের মৌসুমকে কেন্দ্র করে নিয়মিত বসেন এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিয়ে পর্যালোচনা করেন। একে অপরকে পরামর্শ দেন, সে অনুযায়ি সমাধানের চেষ্টা করেন। পাড়াসিধাই গ্রাম মূলত সব্জি চাষের গ্রাম। এই মৌসুমে তাদের প্রধান ফসল শিম। বাণিজ্যিক ভাবেই চাষ হয়। মাঠের পর মাঠ শুধু সীম দেখা যায়। আগের বারে বর্ষা না হবার কারণে প্রায় এক বছর ধরে এলাকা থেকে আমন ধানের আবাদ প্রায় উঠে গেছে। কৃষকরা বাধ্য হয়ে দুটো পয়সার জন্য অটো এবং রূপভান শিমের আবাদ শুরু করছিলেন। ক’ বছর ধরে ভালই লাভ হচ্ছিল। নিজেদের হাতে বীজ রেখে শিমের আবাদ করছিলেন। অন্য বছরের মতো এ বছরও মাঠের সব জমিতে শিমের আবাদ করেন কৃষকরা।
কিন্তু এবার আবহাওয়া অত্যন্ত খারাপ। এ বছর গরম বেশী। তাপমাত্রা বেশী। বৃষ্টি কম। ভরা আষাঢ়ে মাঠে স্যালো পাম্পে ধান লাগাতে হচ্ছে। পাড়াসিধাই গ্রামের শিম চাষীদের মাথায় হাত। কৃষক রিজিয়া বেগম ও সাবের উদ্দিন বলেন এখন মাঠের যে অবস্থা কৃষকের সব অটো এবং রূপভান শিমের জমি ভেঙ্গে শীত মৌসুমের ফসলের জন্য ফেলে রাখতে হচ্ছে।
কৃষক তহুরা বেগম ও সালেহা বেগম বলেন, এবার মাঠে সব শিমের জমিতে তাকালে শুধু হলুদ রং চোখে ভাসে। শিমের গাছের পাতা হলুদ হয়ে গেছে। সবুজ পাতা যদি হলুদ হয়ে যায় তাহলে সেই শিমের গাছে আশা করা যায় না, শিম গাছে লতা পর্যন্ত হলুদ হয়েছে। অতিরিক্ত খড়া ও গরমের কারণে শিম গাছ টিকছে না। মাটি তামার মতো ভাব হয়ে গেছে। এখন আর ধান আবাদ করার সুযোগও নেই। কৃষকরা এখন মাঠ ছেড়ে দিয়েছে।
শিম চাষ করা কৃষকরা বলেন গত দুই মাস ধরে তেমন কোন বৃষ্টি নেই। প্রচুর গরম ও খড়া সমান ভাবে পড়েছে। মাঝে মধ্যে একটু বৃষ্টি হয় তাও আবার ছুটা। এই বৃষ্টিতে শিমের ক্ষতি আরো বেড়ে যায়। শিমের খলোসের মধ্যে পানি ঢোকে, ফুল পঁচে যায়। এক জমিতে শিম উঠাতে গেলে ২ থেকে ৪ কেজি শিম পাওয়া যায়। তাও আবার সেই শিমের গা’ কেমন যেন মরামরা। কেউ কিনতে চায় না। বেশির ভাগ কৃষক শিমের বীজ বাজারের দোকান থেকে কিনে লাগিয়েছে। তাদের কাছে বিষ কোম্পানির লোক এসে প্রস্তাব দেয় “আপনারা এক বিঘা জমি ৪৫০০/= টাকায় আমাদের কন্টাক দেন আমরা শিম গাছে ওষুধ দিয়ে ভালো করে দিবো”। এই কথা শুনে কয়েকজন কৃষক কোম্পানির লোকের কাছে জমি ছেড়ে দেয়। কোম্পানির লোক কিছু ওষুধের বোতল দিয়ে যান। দেয়ার সময় কোম্পানির লোক বোতলের গায়ের মোড়ক তুলে ফেলেন এরপর কৃষকের হাতে দেয়। বোতলের গায়ে কোন কিছু আর লেখা থাকে না। কৃষক জানেও না সে তার শিমের জমিতে কি ওষুধ দিচ্ছে। তারা চার রকমের ওষুধ দিয়েছে। ওষুধ কৃষকের শিমের জমিতে দেবার পরের দিন দেখে শিমের গাছ সব পুড়ে একদম শেষ হয়ে গেছে। আজিজুল হক নামে একজন কৃষক তার দেড় বিঘা জমির শিম গাছে ওষুধ ব্যবহারের ফলে সব শেষ হয়ে গেছে।
ডিলারের লোকজন এসে আজিজুল হকের শিম ক্ষেতের করুন অবস্থা দেখে ২৪ হাজার টাকা জরিমানা দিয়েছে। বাকী কৃষকদের এখন ঐ অবস্থায় আছে।
যাদের নিজের জমি, তাদের একটু কম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা অন্যের জমি লিজ নিয়ে শিম চাষ করেছে, তাদের আরো বেশী ক্ষতি হয়েছে। এক বিঘা জমির লিজ মূল্য ১৩ হাজার টাকা। শিম লাগাতে খরচ হয়েছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। কৃষকরা এক বিঘা শিম চাষে প্রায় ২১ হাজার টাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলতি বছর আর আমন ধান লাগানোর মৌসুমও নাই। আর থাকলেই বা-কি, বৃষ্টিও নেই। সব জমি পতিত পড়ে রয়েছে।
এ বছর শিমের রোগ বলতে শিমের বীজ লাগানোর পর যখন ১-২ হাত লম্বা হয়েছে তখন থেকেই শিম গাছে লাল হয়েছে এবং মাটিতে বসে গেছে। গাছের বাড়ন্ত নাই।
তবে আধুনিক কৃষি পদ্ধতিতে যারা চাষ করেছে তাদের জমিতে অনেক ওষুধ ব্যবহার করেছে। তাদের জমির ভাইরাস নয়াকৃষি কৃষকদের ফসলেও প্রভাব পড়ছে। যেমন শিমের পাতা ও গাছ লাল হওয়া। এটা একটি ভাইরাস। এই রোগের সঠিক নাম কৃষকরা এখনো বের করতে পারেন নাই। রোগ বালাই-হলে, শুধু ওষুধ দিলে ফসল ভালো হবে এই ধারণা কৃষকের ভুল।