মহেশখালী চ্যানেলের পূর্ব প্রান্তে প্যারাবনের কেওড়া ও বাইন প্রজাতির ৬ লক্ষ চারা রোপন
মোহাম্মদ আলী আকবর || Thursday 19 September 2019 ||গত ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তারিখ থেকে মহেশখালী চ্যানেলের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বদরখালী প্যারাবনের বদরখালী ব্রীজের দক্ষিণ থেকে লম্বাখালী পাড়া পর্যন্ত ২ কিলোমিটারেরও বেশী জায়গায় মূল চরের বাইরে জেগে উঠা চরে কেওড়া ও বাইন প্রজাতির প্রায় ৬ লক্ষ চারা রোপন করা হয়। রোপনকৃত চারার মধ্যে রয়েছে প্রায় ৪ লক্ষ বাইন (৬৬.৬৬ শতাংশ) চারা এবং প্রায় ২ লক্ষ কেওড়া (৩৩.৩৩ শতাংশ) চারা। ৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ পর্যন্ত প্যারাবনের চারা রোপনের কাজে যথাক্রমে ২২ জন, ২৩ জন এবং ২৬ জন স্থানীয় লোক কাজ করেছেন, যারা এ কাজে অভিজ্ঞ।
কেওড়া ও বাইনের চারা রোপনের পর গত ৬ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তারিখে আরও ৫ জন অভিজ্ঞ লোক নিয়ে রোপনকৃত চারার মাঝে মাঝে বাইন গাছের ছোট ছোট ডালপালা কেটে পুতে দেওয়া হয়েছে যাতে জোয়ারের সময় কেউ রোপনকৃত চারার অংশে ঠেলা জাল দিয়ে মাছ ধরতে না পারে। কারণ ঠেলা জাল দিয়ে মাছ ধরলে লাগানো চারা উঠে যাবে।
সারি সারি করে লাগানো হচ্ছে কেওড়া ও বাইন চারা
৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৯ তারিখে রোপনকৃত কেওড়া ও বাইন চারার অংশে ৮টি লাল পতাকা (১৫ ইঞ্চি লম্বা এবং ১৩ ইঞ্চি প্রস্থ) ৮টি বাঁশের উপর লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। কারণ দূর থেকে এ পতাকা দেখলে এলাকার যে কেউ বুঝতে পারবে এখানে নতুন করে প্যারাবনের চারা রোপন করা হয়েছে।
এলাকার কৃষক ও অন্যান্যদের সাথে কথা বলে জানা যায় এই প্যারাবনের গুরুত্বের কথা। এই প্যারাবনে প্রচুর পরিমানে উলু খেড় (উলু ঘাস) আছে। উলু খেড় (উলু ঘাস) গরু ও ছাগলের জন্য খুব ভাল খাদ্য হিসেবে পরীক্ষিত। কয়েক মাস একাধারে গরু ও ছাগলকে এই ঘাস খাওয়ালে গরু-ছাগল মোটাতাজা হয়ে উঠে। প্যারাবনে প্রচুর পাখি, কাঁকড়া ও মাছ দেখা যায়। বর্ষা মৌসুমে মাছেরা ডিম দেয়ার জন্য প্যারাবনে চলে আসে। প্যারাবনের ভীতরে ও আশে পাশে প্রচুর পরিমানে চিংড়ি মাছ পাওয়া যায়।
জেগে ওঠা চরে উলু খেড়ের (উলু ঘাস)এর মধ্যে লাগানো হচ্ছে কেওড়া ও বাইন চারা
এলাকার ছোট ছোট ছেলেমেয়ে এবং মহিলারা কেওড়া ফলের মৌসুমে প্রচুর পরিমানে কেওড়া ফল খায়। এ মৌসুমের কেওড়া ফল এখনও গাছে রয়েছে তবে তা খুব কম পরিমানে। অধিকাংশ কেওড়ার ফল পাকার পর গাছ থেকে ঝরে পরেছে। এই কয়দিন কাজ করার সময় কেওড়া ও বাইন গাছের নীচে দেখা গেছে হাজার হাজার ছোট ছোট চারা। যেগুলো থেকে আগামী বছর রোপনের জন্য প্রচুর চারা পাওয়া যাবে।
তবে কেওড়া চারার তুলনায় বাইন চারা অনেক বেশী দেখা যায়। কারণ কেওড়ার গাছ তুলনামূলক কম শক্ত, এজন্য ডালপালা ভাঙ্গে বেশী। অন্যদিকে বাইনের গাছ এতো শক্ত যে ছোট ডালে প্রাপ্ত বয়স্ক একজন উঠলেও ডাল ভাঙ্গে না। কেওড়া গাছের পাতা খুবই নরম এবং গরু ছাগলের খুব পছন্দের এজন্যও কেওড়া গাছের সংখ্যা কম দেখা যায়।
চারা রোপনের সময় কৃষকদের কাছে জানা গেল এ বছর চারা রোপনের উপযুক্ত সময়ে চারা রোপন করা হয়েছে। এলাকায় শীতকালের বাতাস শুরু হতে এখনও আরো আড়াই মাস সময় আছে। এর মধ্যে চারাগুলো সতেজ হয়ে উঠবে। এজন্য লাগানো চারার ৬০-৭০ শতাংশ চারা টিকবে বলে ধারণা অভিজ্ঞদের। অন্যান্য বছর যেটা ৫০ শতাংশের নীচে নেমে আসে শুধুমাত্র পরে চারা রোপনের কারণে। কারণ উত্তর দিক থেকে শীতের বাতাস শুরু হলে জোয়ারের তীব্রতা কমে যাওয়ায় বেশী পানি হয় না এবং মাটি শক্ত হয়ে যায়। মাটি শক্ত হলে নতুন চারা অনেক মারা যেতে পারে। এ সময় প্রাপ্ত বয়স্ক গাছেরও প্রচুর পাতা ঝরে পরে।
প্যারাবনে কাজের সময় দেখা গেছে মহেশখালী চ্যানেলের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বদরখালীর এ প্যারাবনের পাশে নদী একটুও ভাঙ্গেনি প্যারাবনের গাছ থাকার কারণে। কিন্তু পশ্চিম প্রান্তে অর্থাৎ মহেশখালীর প্রান্তে নদী অনেক ভেঙ্গে গেছে প্যারাবন না থাকার কারণে। প্যারাবন থাকার কারণে বদরখালীর প্রান্তে নদী আস্তে আস্তে ঢালু হয়েছে অন্যদিকে মহেশখালীর প্রান্তে নদীর ঢাল একেবারে খাড়া।
মূল প্যারাবনের বাইরে জেগে ওঠা চর