রানা প্লাজার ক্ষতিপূরণঃ প্রথম কিস্তি

সেপ্টেম্বর, ২০১৪ শেষ সপ্তাহে রানা প্লাজা ধসে নিহত শ্রমিক পরিবার ও আহত শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণের প্রথম কিস্তি দিয়েছে রানা প্লাজা সমন্বয় কমিটি। ক্ষতিপূরণ পেয়েছেন নিহত শ্রমিকদের পরিবারের এক হাজার ৫৫২ সদস্য ও আহত ৩৫ শ্রমিক।
ক্ষতিপূরণের জন্য গঠিত আন্তর্জাতিক তহবিল রানা প্লাজা ডোনারস্ ট্রাষ্ট ফান্ড থেকে আহত শ্রমিকদের পরিবারের সদস্যদের নিজস্ব ব্যাংক হিসাবে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১২ কোটি ৭০ লক্ষ টাকা জমা হয়েছে। এর মধ্যে নিহত পরিবারের এক হাজার ৫৫২ সদস্যদের ব্যাংক হিসাবে ১২ কোটি ৫৭ লক্ষ ৮৩ হাজার ৪১৮ টাকা এবং ৩৫ জন আহত শ্রমিককের ব্যাংক হিসাবে ১৩ লক্ষ ৬ হাজার ৮৩২ টাকা জমা হয়েছে। সমন্বয় কমিটির সদস্য সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহম্মদ বলেন এক হাজার ৫৮৭ জনের ব্যাংক হিসাবে ক্ষতিপূরণের টাকা চলে গেছে। এখন তারা প্রয়োজন অনুসারে টাকা উত্তোলন করতে পারবে (প্রথম আলো, ৩ অক্টোবর, ২০১৪)।
ক্ষতিপূরণের এ অর্থ ব্যাংকে জমা করার আগে প্রধান মন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে দেওয়া অর্থ কর্তন করে রাখা হয়েছে। এখন যে সব আহত শ্রমিক ক্ষতিপূরণ পেলেন তাদের অধিকাংশ অধিক ক্ষতিগ্রস্থ। পরে যে সব আহত শ্রমিক ক্ষতিপূরণ পাবেন তাদের আহতের পরিমাণও কম এবং তারা প্রধান মন্ত্রীর তহবিল থেকেও ক্ষতিপূরণ পায় নি।
২৪ এপ্রিল, ২০১৩ সাভারের রানা প্লাজা ধসে এক হাজার ১৩৬ জন শ্রমিক নিহত হয়। আহত হয় আরও অনেকে। ঘটনার পর দেশে বিদেশে সমালোচনার ঝড় উঠলে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বে ক্ষতিপূরণের জন্য সমন্বয় কমিটি গঠিত হয়। সমন্বয় কমিটিতে আছেন-বিদেশী ক্রেতা প্রতিষ্ঠান, দেশী-বিদেশী শ্রম সংগঠন ও সরকারের প্রতিনিধিরা। কো-অডিনেশন কমিটির সর্বশেষ ১৩ তম বৈঠকে ৪০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ দেওয়ার একটি ‘সময়সীমা’ চূড়ান্ত করা হয়েছিল। মোট পাঁচটি ধাপে ২৯ বা ৩০ অক্টোবর, ২০১৪ মধ্যে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার কথা ছিল।
৩১ জুলাই, ২০১৪ ছিল রানা প্লাজার ক্ষতিপূরণের জন্য তহবিলে অর্থ জমা দেওয়ার শেষ সময়। রানা প্লাজায় পাঁচটি কারখানার যে সব বিদেশী কোম্পানী পোশাক তৈরী করাত তাদেরই এই তহবিলে অর্থ দেওয়ার জন্য বলা হয়েছিল। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) নেতৃত্বধীন রানা প্লাজা ব্যবস্থাপনা সমন্বয় কমিটি বা রানা প্লাজা অ্যারেঞ্জমেন্ট কো-অডিনেশন কমিটি ক্ষতিপূরণের জন্য প্রায় ৩২০ কোটি টাকা বা চার কোটি ডলারের তহবিল গঠনের ঘোষণা দেয়।
২০১৪ সালের জুলাই মাসের শেষ সপ্তাহের মধ্যে ৭০০ জনের ক্ষতিপূরণের প্রথম কিস্তির টাকা ব্যাংকে চলে যাবার কথা থাকলেও ৩১ জুলাই পর্যন্ত ক্রেতারা প্রয়োজনীয় অর্থ দেয় নি। এর মধ্যে মাত্র ১ কোটি ৭৭ লক্ষ মার্কিন ডলার বা ১৪১ কোটি টাকা জমা পড়েছে।
ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের কাছ থেকে মার্চ, ২০১৪ দাবিনামা বা ক্লেইম ফরম পূরণ শুরু করা হয়। সব মিলিয়ে দুই হাজার ৭৬৩ জন হতাহতের পরিবারের দাবিনামা পূরণ সম্পন্ন হয়েছে। এর মধ্যে ৬৬০ জন নিহত শ্রমিকের পরিবার। কিন্তু মোট নিহতের সংখ্যা হলো ১১৩৬ জন।
আন্তর্জাতিক শ্রম সংগঠন ক্লিন ক্লথ ক্যাম্পেইন সূত্রে জানা যায় রানা প্লাজায় পাঁচ কারখানায় পোশাক তৈরী করাত এমন ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ২৯টি। এর মধ্যে ১৫টি প্রতিষ্ঠান তহবিলে অর্থ দেয় নি। এমন কি কোন প্রতিশ্রুতিও দেয় নি।
কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী প্রত্যেক নিহত, নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবার এবং স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যাওয়া শ্রমিক ১৪ লক্ষ ৫১ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ পাবার কথা। আর আহত হওয়ার ধরণ অনুযায়ী শ্রমিকেরা পাবেন দেড় লক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সারে সাত লক্ষ টাকা।
কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে নিহত, নিখোঁজ শ্রমিকের পরিবার, আহত ও স্থায়ীভাবে পঙ্গু হয়ে যাওয়া শ্রমিকেরা সকলে আদো ক্ষতিপূরণ পাবে কি না তা বলা মুশকিল। বর্তমানে একজন নিহত শ্রমিক মাথাপিছু কত ক্ষতিপূরণ পেলো তাও জানা যায় নি। বিদেশী ক্রেতাদের ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যাপারে বিজিএমইএ’ ও তেমন কোন ভূমিকা রাখছে না। এই ক্ষতিপূরণের চার কোটি ডলার বিদেশী ক্রেতাদের জন্য খুব বড় অংকের বিষয় নয়। বিষয়টি মানবতার। বিদেশী ক্রেতারা এতগুলো শ্রমিকের মৃত্যুর দায়ভার কোনভাবেই এড়িয়ে যেতে পারে না।