উপজেলা স্বাস্থ্য সেবা
ফরিদা আখতার ও রোকেয়া বেগম || Thursday 02 September 2010 ||উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ও ভুল চিকিৎসার খতিয়ান
বাংলাদেশে সরকারী স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার মাধ্যম গ্রামের মানুষের জন্য উপজেলা পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রকেই ধরা হয়। এ ছাড়া ইউনিয়ন পর্যায়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং কমিউনিটি ক্লিনিক থাকলেও সেখানে স্বাস্থ্য সেবা পুর্ণাংগ নয়, কারণ ইউনিয়ন পর্যায়ে সেবা মুলত পরিবার পরিকল্পার জন্যে, তাই এখানে সব ধরণের রোগের চিকিৎসা সেবা দেয়ার ব্যবস্থা নেই।
আমরা জানি, ৩১ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা পর্যায়ে হাসপাতালে ৯ জন, ৫০ শয্যা বিশিষ্ট উপজেলা হাসপাতালে ২০ জন চিকিৎসক পদ রয়েছে, এর মধ্যে বিশেষজ্ঞ পদ (গাইনী, সার্জারী, ইএনটি এবং মেডিসিন) ৪টি রয়েছে। সাধারণভাবে যে কোন উপজেলা হাসপাতালে গেলে চিকিৎসক পাওয়া না যাওয়ার অভিযোগ শোনা যায়। শুধু তাই নয়, চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে ভুল চিকিৎসার শিকার হয়ে রোগীর ভোগান্তি ও মৃত্যুর খবরও প্রায় শোনা যায়। উবিনীগ এ বিষয় নিয়ে দীর্ঘদিন পর্যবেক্ষণ করছে। এবার আমরা পত্রিকার খবর পর্যবেক্ষণ করেছি একেবারে সাম্প্রতিক কালে (মে থেকে জুলাই, ২০১০) উপজেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্য অবস্থা জানার জন্যে। দৈনিক পত্রিকাগুলো থেকে তথ্য নেয়া হয়েছে। যে সব পত্রিকা এই পর্যবেক্ষণে ব্যবহার করা হয়েছে সেগুলো হচ্ছে যায় যায় দিন, আমার দেশ, ইত্তেফাক, দৈনিক সমকাল, যুগান্তর, প্রথমআলো, নয়াদিগন্ত, কালের কন্ঠ ইত্যাদি। এ ছাড়াও অন্যান্য পত্রিকার খবর আমরা দেখেছি। এখানে উল্লেখ্ করা প্রয়োজন, দেশের স্বাস্থ্য সেবার অবস্থা তুলে ধরার ক্ষেত্রে মফস্বল সাংবাদিকদের ভুমিকা প্রশংনীয়। স্বাস্থ্য সেবা মানুষের কাছে পৌঁছানোর বিষয়টি তুলে ধরার জন্য তাঁদের নিরলস চেষ্টা রয়েছে। তাদের এ অবদান কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করছি।
তিন মাসে প্রায় ৫১টি উপজেলার খবর এবং ২৫টি এলাকায় ৩৫টি ভুল চিকিৎসার ঘটনা উল্লেখিত পত্রিকাগুলোতে প্রকাশিত হয়েছে। বিভিন্ন শিরোনামে উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কথা প্রাকাশিত হয়েছে। যেমন দুর্ভোগের শেষ নেই রোগীদের, সমস্যা জর্জরিত বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, রৌমারী হাসপতালে ৭ দিন ধরে চিকিৎসক নেই ইত্যাদি।
উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের চিত্রঃ
সব সমস্যার মধ্যে প্রধান দুটি সমস্যা যেমন ডাক্তার সংকট এবং যন্ত্রপাতি এবং মেশিনের অকার্যকারীতার কথা প্রধানত এসেছে। ডাক্তার সংকট এসেছে ৩৩টি উপজেলার ক্ষেত্রে এবং যন্ত্রপাতি এবং মেশিনের অকার্যকারীতার কথা এসেছে ৩৪টি উপজেলার ক্ষেত্রে।
ডাক্তার সংকট বলতে চিকিৎসকের পদে নিয়োগ প্রাপ্ত চিকিৎসক যা আছে তার চেয়ে অনেক কম স্বাস্থ্য কেন্দ্রে গিয়ে পাওয়া যায়। যেমন ১৫ জন থাকার কথা কিন্তু আছে মাত্র ৩ জন, ১২ জন থাকার কথা কিন্তু আছে মাত্র ২ জন, ২০ জন থাকার কথা আছে ৩ জন, ৯ জন থাকার কথা কিন্তু আছে ২ জন। গড়ে উপজেলা ও সদর হাসপাতালে চিকিৎসকের উপস্থিতির হার মাত্র ১৭%। ডাক্তার না থাকায় রোগীরা সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের তথ্য থেকে বোঝা যায়, সরকারী স্বাস্থ্য কেন্দ্র ছাড়া জনগনের আর কোন চিকিৎসা পাবার উপায় নেই।
স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার উপস্থিত না থাকার ব্যপারটি আরও হাস্যকর হয় যখন সেখানে বিড়ালকে ডাক্তারের টিবিলে ফ্যানের বাতাসে আরাম করে ঘুমাতে দেখা যায়। ঘটনাটি ঘটেছে শিবালয় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।
চিকিৎসকের পদে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিয়োগ না দেয়ার খবরও ছাপা হয়েছে। যেমন মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, সার্জারী, গাইনী ও এনেসথেসিয়া বিভাগে নিয়োগ দেয়া হয় নি, অর্থাৎ পদটি শুন্য রয়েছে। ডাক্তার বদলী হয়ে যাওয়ার পর ডাক্তার নিয়োগ না দেয়ার কথা উঠেছে। চৌত্রিশটি পদের মধ্যে ১৭টি পদ, (৫০% ভাগ) শুন্য রয়েছে। কিছু কিছু এলাকায় মোটেও নিয়োগ দেয়া হয় নি। বলা বাহুল্য, এই সব এলাকা হচ্ছে পার্বত্য চট্টগ্রাম কিংবা আন্যান্য দুর্গম এলাকা। খাগড়াছড়ি জেলার ৪টি উপজেলার (পানছড়ী, দিঘিনালা, লক্ষীছড়ি ও মাটিরাঙ্গা) অবস্থা আরও করুণ। এখানে ৪টি উপজেলায় ৭৯টি পদে একজনও চিকিৎসক নিয়োগ দেয়া হয় নি। শেষ পর্যন্ত মাটিরাঙ্গা উপজেলার তবলছড়ি ইউনিয়নের স্বাস্থ্য কেন্দ্রটি পুলিশের ফাঁড়ী হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের অভাব, কোন ক্ষেত্রে এনেস্থেসোলজিস্টের অভাবে উপজেলা হাসপতালে অস্ত্রপচার কার্যক্রম চালু করা যাচ্ছে না। এই তথ্যটি এসেছে কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে। অর্থাৎ ঢাকা শহরের অতি কাছের একটি উপজেলায়ও বিশেষজ্ঞ নিয়োগ সম্ভব হয় নি। গলাচিপা স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২০ জনের কাজ মাত্র তিন জন চিকিৎসককে করতে হচ্ছে। রোগীর উপচে পড়া ভিড় সামাল দিতে হিম সিম খাচ্ছেন এই তিন জন চিকিৎসক। এখানেও কোন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক নেই, বিশেষ গাইনী, ডেণ্টাল সার্জন, না থাকায় সব ধরণের চিকিৎসা এই তিন জনকে করতে হচ্ছে।
চিকিৎসক অনুপস্থিত থাকা এক ধরণের সমস্যা কিন্তু নিয়োগ না দেয়ার কারণে চিকিৎসকের স্বল্পতা চিকিৎসা সেবা থেকে জনগনকে বঞ্চিত করছে, সেটা আরও বড় সমস্যা। সেখানে মরার ওপর খাড়ার ঘা হিসেবে আসছে ডাক্তারের প্রাইভেট প্রাক্টিস। অফিস চলাকালীন সময়ে প্রাইভেট প্রাক্টিস করতে গিয়ে ধরা পড়েছেন একজন। তিনি কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার। সিলেটের বড় লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ডাক্তার স্থানীয় ক্লিনিকে প্রাইভেট প্রাক্টিস নিয়ে ব্যস্ত থাকেন। সরকারী দায়িত্ব পালনের সময়ও তাদের ওষুধ কোম্পানীর রিপ্রেসেনটেটিভদের সাথে খোশ গল্পে মত্ত থাকতে দেখা যায়। বেশির ভাগ সময় আবাসিক ভবনে প্রাইভেট প্র্যক্টিসে ব্যস্ত থাকেন। এই ধরণের চিকিৎসকদের কারণে হাসপাতালে দালালের প্রকোপ বেড়ে গেছে। কিশোরগঞ্জে তাড়াইল স্বাস্থ্য প্রকল্পে বিভিন্ন পরীক্ষার নামে রোগীদের হয়রানী করা হয়। প্রাইভেট প্রেক্টিসের কারণে বিভিন্ন পরীক্ষার জন্যে রোগীরা হয়রানীর শিকার হচ্ছেন।
অপর্যাপ্ত ওষুধ জনগনের দুর্ভোগ আরো বাড়িয়ে দেয়। প্রথমত রোগীদের বাইরে থেকে কিনে খেতে হয়, চিকিৎসকরাও ওষুদের ডোজ ভুল দিয়ে দেন, নিম্ন মানের ওষুধ দেয়ার অভিযোগ ওঠে। তবে হাসপাতালে ওষুধের তালিকা ঝোলানো থাকে কিন্তু বাস্তবে তা পাওয়া যায় না।
এক্সরে মেশিন সংকট, অকেজো এম্বুলেন্স, অপর্যাপ্ত বেড সংখ্যা, জেনারেটরের অভাব ইত্যাদি বড় ধরণের সমস্যা হিসেবে এসেছে। প্রায় ৩৪টি উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রেই এই খবর আছে। উপজেলা হাসপাতালে অস্ত্রচারের ব্যবস্থা থাকলেও বিদ্যুৎ না থাকলে হ্যজাক লাইট জ্বালিয়ে কিংবা মোমবাতি দিয়ে অপারেশন করা হয়। অথবা অপারেশন কার্যক্রম বন্ধ রাখতে হয়। এক্সরে মেশিন দেয়া হয়েছে কিন্তু ফিল্ম নাই, কিংবা মেশিন একবার নষ্ট হলে আর ঠিক করা হ্য় না। কিন্তু এক্সরে টেকনিশিয়ান বসে বসে বেতন গু্নছে প্রতি মাসে। মংলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৮ বছর ধরে জেনারেটর বিকল হয়ে আছে। যন্ত্রপাতির অভাবে প্যাথলজিকাল পরীক্ষা হয় না। যন্ত্রপাতি অবহেলার কারণেও নষ্ট হচ্ছে বলে কিশোরগঞ্জের ইটনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সম্পর্কে জানা গেছে। ফ্যান অকেজো, মহিলা ওয়ার্ডে সীট গুলো নষ্ট এমনি অভিযোগ আছে। এম্বুলেন্স প্রায় সময় বিকল হয়ে পড়ে থাকে।
প্রাইভেট ক্লিনিকে ভুল চিকিৎসা
পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের মধ্যে অস্ত্রপচারের সময় কিংবা পরে মৃত্যুর ঘটনা প্রাধান্য পেয়েছে। ভুল চিকিৎসা সরকারী হাসপাতাল এবং প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোতে বেশি ঘটছে। এখানে সেই তথ্য তুলে ধরা হচ্ছে। প্রকাশিত খবরে ভুল চিকিৎসায় মারা যাওয়ার তথ্য পেয়েছি ৬টি, ভুল ওষুধ দেয়ার ঘটনা পেয়েছি ১৪টি, ডাক্তারের অবহেলার ঘটনা ১৩টি, বিনা চিকিৎসার ঘটনা ২টি। এসব ক্ষেত্রেই রোগী মারা গেছে বলে পত্রিকার শিরোনাম হয়েছে। এই ধরণের তথ্য ২৫টি এলাকার মোট ৩৫ জনের মৃত্যু ঘটনা আমরা পেয়েছি।
ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুঃ
আমরা জানি যে কোন ঘটনা পত্রিকার শিরোনাম হতে হলে মৃত্যু কিংবা বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটার প্রয়োজন হয়। অস্ত্রপচারের সময় অন্য সমস্যাগুলো যা সব সময় ঘটছে তা শিরোনাম হয় না। অস্ত্রপচারের সময় মৃত্যুর ঘটনার খবরে বেশির ভাগই এনেসথেসিয়া দেয়ার পর মৃত্যু ঘটেছে বলে উল্লেখ করা হয়।
একজন রোগী (ফিরোজ মাহমুদ অভি)ফুটবল খেলতে গিয়ে বাম হাতের কব্জিতে ব্যথা নিয়ে ফরিদপুর জেলা শহরের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের ডাক্তারের কাছে গেলে অস্ত্রপচার করেন, এবং এনেসথেসিয়া দেয়ার পর রোগী মারা যান। [কালের কন্ঠ, ১ জুলাই, ২০১০]
একজন গার্মেন্ট শ্রমিক গলা ব্যথা নিয়ে ধনবাড়ী উপজেলার একটি ডায়াগনস্টিক ক্লিনিকে গেলে টনসিলের সমস্যার কথা বলে ডাক্তার তাকে অস্ত্রপচার করতে বলে। অস্ত্রপচারের পর নির্ধারিত সময় পার হবার পরও রোগীর জ্ঞান ফেরে নি। পরে মৃত ঘোষনা করা হয়, [সমকাল ২ জুন, ২০১০]।
বরিশালের উজিরপুরে একজন প্রাইভেট ডাক্তারের ব্যক্তিগত চেম্বারে একজন রোগী, রানী বেগমকে পেটে টিউমার আছে বলে অস্ত্রপচারের পরামর্শ দেয়া হয় কিন্তু অস্ত্রপচার করে রোগীর পেটে কোন টিউমার না দেখে ডাক্তার পালিয়ে যান, [যায় যায় দিন, ১৯ মে, ২০১০]
খোদ ঢাকা শহরে অস্ত্রপচারের সময় ভুল চিকিৎসার ঘটনা অহরহ ঘটছে। মিরপুরের একটি ক্লিনিকে রোগীর গলায় তিন বার অস্ত্রপচার করা হয়, তৃতীয় বারে গলা থেকে গজ, ব্যান্ডেজ বের করা হয়, [সমকাল, ২৭ মে, ২০১০]
এই সব ঘটনার কোন ফলো-আপ রিপোর্ট দেখা যায় নি। এবং বলাই বাহুল্য দোষী ব্যক্তিদের ব্যাপারে কোন শাস্তিমুল্ক ব্যবস্থা গ্রহন করা হয়েছে বলেও শোনা যায় নি।
ভুল ওষুধ প্রয়োগঃ
প্রায় ক্ষেত্রে ভুল চিকিৎসার পাশাপাশি ভুল ওষুধ প্রয়োগ রোগীদের মারাত্মক সমস্যার সৃষ্টি করে। এখানে ভুল ওষুধ প্রয়োগের ফলে মৃত্যুর ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু শত শত রোগী ভুল ওষুধের ফলে নানা রকম স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছেন সে তথ্য পত্রিকায় আসছে না।
ওষুধের দোকানে গিয়ে রোগী ডাইরিয়া রোগের জন্য গেলে একই রকম দেখতে স্যালাইনের প্যাকেট ভেবে গরুর উকুন মারার ওষুধ (নেগোডক্স পাউডার) রোগীকে দেয়া হয়, এবং তা খেয়ে রোগী আরও অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। ফরিদপুর ভাঙ্গা উপজেলায় এই ঘটনা ঘটে। কিন্তু একই সাথে ঘটনাটি আরও মারাত্মক হয়েছে তখন হাসপাতালে নেয়ার পর ডাক্তার না থাকায় মেডিকেল সহকারী রোগীকে আরো দুটি ইঞ্জেকশন দেন। এতে অবস্থার আরও অবনতি হয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটে [সমকাল, ৫ জুলাই, ২০১০ । অর্থাৎ ওষুধের দোকানের ভুল আরো মারাত্মক রূপ নেয় হাসপাতালে ডাক্তারের অনুপস্থিতি। রোগীর মৃত্যু নিশ্চিত করার এইটুকু যথেষ্ট।
কেরানী গঞ্জের একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে এক রোগীকে বুকে ব্যথার জন্য নিলে ডাক্তার ইসিজি করিয়ে দুই ধরনের ওষুধ এবং ইঞ্জেকশান দেন, দেয়ার পরেই রোগী নিস্তেজ হয়ে পড়ে। অবস্থা বুঝে ঢাকা মেডিকেলে পাঠিয়ে দেয়া হয় কিন্তু নেয়ার পর রোগী মারা যায় [ কালের কন্ঠ ৯ জুলাই, ২০১০]।
কুমিল্লার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে হাইপো গ্লাইসেমিয়ার রোগী আম্বিয়া খাতুনকে প্রথম দিনে ইনসুলিন দেন এবং স্ট্রোক হয়েছে উল্লেখ করে অন্য ওষুধ দেন। কিন্তু ব্লাড সুগার ১.২ ধরা পরায় রোগী আরও অসুস্থ হয়ে কমায় চলে যায়। অবস্থা খারাপ দেখে ঢাকার বার্ডেমে নেয়ার পরামর্শ দেন কিন্তু ঢাকায় বার্ডেমের চিকিৎসকরা রোগীকে গ্লুকোসের পরিবর্তে ইন্সুলিন দেয়ার ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করেন। রোগীর কোন স্ট্রোক ছিল না কিন্তু স্ট্রোকের ওষুধ দেয়াতে রোগীর অবস্থা খারাপ হয় এবং শেষ পর্যন্ত মারা যায়। [কালের কন্ঠ ১৯ জুলাই, ২০১০]
খুলনার সোনাডাঙ্গায় একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে তিনজন রোগীকে মেয়াদোত্তীর্ণ ইঞ্জেকশান পুশ করায় সঙ্গে সঙ্গে অস্বাভাবিক যন্ত্রণা অনুভব করেন এবং এক জন রোগী মৃত্যু বরন করেন, [ আমার দেশ, ২৯ জুলাই, ২০১০]
দিনাজপুরে একটি সরকারী হাসপাতালে একজন বিষ ক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে নিলে ইন্টারনী ডাক্তার তাকে পরদিন সকালে ইঞ্জেকশান দেয়ার সাথে সাথে রোগী মৃত্যু কোলে ঢলে পড়ে [কালের কন্ঠ ২৩ জুন, ২০১০ ।
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে একটি ফার্মেসীতে এক জন দিনমজুর গাছ কাটতে গিয়ে হাত কেটে যাওয়ার কারণে চিকিৎসা নিতে আসে। পল্লী চিকিৎসক তাকে একাধিক ইঞ্জেকশান পুশ করেন। এতে সাথে সাথে দিনমজুর হান্নান মারা যায় [সমকাল, ২৮ মে, ২০১০]।
চিকিৎসকের অবহেলাঃ
চিকিৎসকের অবহেলার অভিযোগ সব সময় উঠছে। সরকারী হাসপাতাল এবং প্রাইভেট ক্লিনিকে এই সব ঘটনা একইভাবে ঘটছে। অবহেলা বলতে প্রধানত বলা হয় রোগীর প্রয়োজনের সময় ডাক্তারকে খবর দিলেও না আসা, রোগীর প্রতি মনোযোগ না দেয়া বোঝায়।
পঞ্চগড়ে মা ও শিশু কল্যান কেন্দ্রে এক প্রসুতির মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে। তার প্রসব বেদনা শুরু হলে তাকে এই কেন্দ্রে ভর্তি করা হলেও সারাদিন ডাক্তার রোগীর কোন খোঁজ খবর নেন নি।শেষে সন্ধ্যায় একটি ইঞ্জেকশান দিলে স্বাভাবিক প্রসব হবে বলে জানান। কিন্তু সাথে সাথে রোগীর মৃত্যু ঘটে। কিন্তু চিকিৎসক তাকে আধুনিক সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন, [কালের কন্ঠ, ১৯ জুন, ২০১০, প্রথম আলো ১৯ জুন, ২০১০]
চট্টগ্রামের বাঁশখালী হাসপাতালে রোগীকে খুব অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ডাক্তার চিকিৎসা না দিয়ে মোবাইল ফোনে গল্প করতে থাকেন। টানা তিন ঘন্টা রোগীকে কোন চিকিৎসা না দেয়ার ফলে রোগী যন্ত্রনায় ছটফট করতে করতে মারা যায়, [যুগান্তর, ১৯ জুন, ২০১০]
এখানে দেখা যাচ্ছে প্রাইভেট হাসপাতালে রোগীর মৃত্যু হলে কিংবা রোগী মুমুর্ষ অবস্থায় চলে গেলে তাদের সরকারী হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়ার প্রবনতা দেখা যাচ্ছে। অর্থাৎ প্রাইভেট ক্লিনিকে মৃত্যুর ঘটনা কম ঘটে এটাই তারা প্রমান করতে চায়।
শেষ কথাঃ
পত্রিকার এই রিপোর্টগুলো গত তিন মাসের ঘটনা থেকে নেয়া। কিন্তু এর মধ্যে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার একটি সার্বিক চিত্র ফুটে উঠেছে। এই চিত্র ভয়াবহ এবং অবিলম্বে সরকারের নজরে বিষয়টি তুলে ধরে এই অবস্থার উন্নতি করা প্রয়োজন। সাধারণ মানুষের চিকিৎসা সেবার দেয়ার জন্য সরকারী স্বাস্থ্য ব্যবস্থা উন্নত করার কোন বিকল্প নাই। প্রাইভেট ক্লিনিকের ব্যবসায়ী মনোভাব রোগীদের দুর্দশাকে সম্বল করে তাদের মুনাফা করার জন্যই ব্যস্ত। স্বাস্থ্য সেবা প্রদানের জন্য সরকারী হাসপাতালের বিকল্প প্রাইভেট ক্লিনিক হতে পারে না।
(ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ১ লা সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে সাংবাদিকদের সাথে মত বিনিময়ের জন্য উপস্থাপিত)