খাদ্য চাষের দাবিতে বিক্ষুদ্ধ কৃষকদের র্যালি ও মনববন্ধন
গোলাম রাব্বী বাদল এবং আব্দুল জব্বার || Sunday 30 November 2014 ||তামাক কোনো খাদ্য শস্য নয়, মানুষের কোনো উপকারে আসেনা, এমনকি পশু খাদ্যও নয় অথচ প্রতিবছর তামাক বৃদ্ধি পাচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণের তথ্য অনুসারে দেশে ২০১২-১৩ মৌসুমে ৭০,০০০ হেক্টর জমিতে এবং ২০১৩-১৪ মৌসুমে ১০৮,০০০ হেক্টর জমিতে তামাক চাষ হয়েছে। সাময়িক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে কৃষকদের তামাক চাষে আগ্রহী করে তোলা হচ্ছে। ফলে খাদ্য ও অর্থকারী ফসলের জমি চলে যাচ্ছে তামাকের দখলে। সরকারের দেওয়া কোটি কোটি টাকার ভর্তূকি সার ও সেচ সুবিধা ব্যবহার করে বছরের পর বছর মুনাফা লুটে নিচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। কিন্তু এই একলক্ষ হেক্টর জমিতে খাদ্য শস্য উৎপাদন করা হলে দেশের খাদ্য নিশ্চয়তায় সহায়ক হতো। তামাক কোম্পানিগুলো থেকে তামাকচাষীরা যে লাভ পায় তার সিংহ ভাগই চলে যায় কোম্পানির ঋণ শোধ দিতে আর বাকি যেটুকু থাকে সেটা যা তামাক জনিত রোগের চিকিৎসার খরচ মেটাতে। অপরদিকে তামাক চাষ এবং তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণে দীর্ঘ সময় লাগে। ফলে এলাকরা গ্রামীণ পরিবারগুলো বছরের অধিকাংশই সময় বিভিন্ন অসুস্থতায় ভোগেন। এছাড়া তামাক চাষে অতিরিক্ত সার ও কীটনাশক ব্যবহারের কারণে একদিকে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে একই সাথে জমির উৎপাদিকা শক্তি মারাত্মক রকম ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তামাক চাষের জমিতে অন্য ফসল উৎপাদন করা বেশ কষ্টকর ও ব্যয় সাপেক্ষ। এছাড়া তামাক চাষের পাশের জমিতে অন্য ফসল আবাদ করা কঠিন রকম বাঁধার সম্মুখিন হতে হচ্ছে। অথচ তামাকচাষ নিরুৎসাহিতকরণে রাষ্ট্রীয়ভাবে কোন নীতিমালা না থাকায় বিগত কয়েক দশকে অরক্ষিত কৃষকদের ব্যবহার করে তামাক কোম্পানিগুলো আগ্রাসীভাবে তামাকচাষ বাড়িয়ে চলেছে। ফলে সারা দেশে এই বিষাক্ত ফসলের আবাদ আশঙ্কাজনকভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। দেশে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ মোকাবেলার বিধান সম্বলিত কোন কার্যকর তামাকচাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা না থাকায় তামাক কোম্পানিগুলোর আগ্রাসী কার্যক্রম বেড়েই চলেছে। উল্লেখ্য যে একটি কার্যকর তামাকচাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নই আগ্রাসী তামাক কোম্পানিগুলোর নিষ্ঠুর জাল থেকে কৃষকদের সুরক্ষা প্রদানের মাধ্যমে তামাকচাষ রুখতে সক্ষম।
এ সব কঠিন বাস্তবতার কারণে ভুক্তভোগি তামাকচাষীসহ এলাকার বিক্ষদ্ধ কৃষকসমাজ বিকল্প চাষের দাবিতে ২৩ নভেম্বর কুষ্টিয়া এবং ২৭ নভেম্বর বান্দরবানে র্যালি এবং মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করেন।
কুষ্টিয়ায় বিক্ষুদ্ধকৃষকদের র্যালি কুষ্টিয়ার তামাক চাষ এলাকা মিরপুর উপজেলার বড়বাড়িয়ার দক্ষিণ পাড়া থেকে শুরু করে আমিন বাজার প্রদক্ষিণ করে পুনরায় আমিন বাজারে এসে মানববন্ধন করেন এবং বান্দরবানের র্যালীটি লামা পৌরসভার কলিঙ্গা বিল থেকে শুরু হয়ে লামা মুখ এসে সেখানে মানববন্ধন করেন।
এই কর্মসূচিতে কুষ্টিয়া এবং বান্দরবান জেলার তামাক চাষ এলাকার বিক্ষুদ্ধ কৃষক সমাজের কৃষকরা তামাক চাষের বিভিন্ন ক্ষতি ও তামাক কোম্পানি প্রদত্ত ভূয়া লাভালাভির গুমোর জনসম্মুখে উপস্থাপন করেন। কৃষকরা বলেন, এদেশের কৃষক এবং কৃষি গ্রামীণ ও জাতীয় অর্থনীতির মূল চালিকা শক্তি। এসবের সুরক্ষা করা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব। এ দেশের জনগণের স্বার্থে কৃষি এবং কৃষকেদের ক্ষতিকর তামাক চাষের পরিবর্তে বিকল্প ফসল চাষাবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করণ এবং সার্বিক সহযোগিতা করা সরকারের দায়িত্ব।
এই কর্মসূচিতে বিক্ষুদ্ধ কৃষক সমাজের পক্ষ থেকে কুষ্টিয়া এলাকায় বক্তব্য রাখেন- শিউলি আক্তার, মো. আব্দুল বারী, হাবিবুর রহমান, আছিরউদ্দিন বিশু এবং আমিনুল ইসলাম গাইন। আর বান্দরবার এলাকায় বক্তব্য রাখেন- খাইরুল আমিন, জাহানারা বেগম, মোমেনা বেগম, ইসহাক আমিন, ফরিদ উদ্দিন এবং মোজাফফর আহমদ।
বিক্ষুদ্ধ কৃষক সমাজের এই কর্মসূচিতে বিভিন্ন দাবী উত্থাপন করা হয়। তারমধ্যে দুটি প্রধান দাবী হচ্ছে
১। রাষ্ট্রয়ভাবে কৃষকদের তামাকের বিকল্প ফসল চাষে উদ্বুদ্ধ করণ ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান।
২। তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপ মোকাবিলার বিধান সম্বলিত একটি কার্যকর তামাকচাষ নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।