নয়াকৃষি আন্দোলনের কৃষকদের 'নিরাপদ খাদ্য মেলা' অনুষ্ঠিত
টাঙ্গাইলের দেলদুয়ার উপজেলার বিষ্ণুপুর গ্রামে উবিনীগ কেন্দ্রে দুই দিন ব্যাপী নয়াকৃষি আন্দোলনের কৃষকদের 'নিরাপদ খাদ্য মেলা' অনুষ্ঠিত হয়। মেলা ৩০ থেকে ৩১ অক্টোবর ২০১৮ ব্যাপী দুইদিন ধরে চলে। মেলার আয়োজক উবিনীগ, বীজবিস্তার ফাউনডেশান, বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য নেটওয়ার্ক এবং দেলদুয়ার উপজেলা পরিষদ। সহায়তায় জাতিসংঘের খাদ্য এবং কৃষি সংস্থা (FAO)-র নিরাপদ খাদ্য প্রকল্প।
মেলায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মোছাঃ নাদিরা আখতার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, দেলদুয়ার; সভাপ্রধান হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান জনাব এস.এম ফেরদৌস আহম্মেদ; বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার নিয়ন্তা বর্মণ, মোঃ আব্দুল্লাহ আল-মামুন, উপজেলা শিক্ষা অফিসার, ডাঃ হাবিবুর রহমান উপজেলা প্রাণীসম্পদ অফিসার, পুতুল রানী সাহা, উপজেলা সেনেটারী ইন্সপেক্টর, ইউপি সদস্য মোঃ সোনাউল্লাহ, মোঃ আব্দুল্লাহ মিয়া উপজেলা ভোক্তা কমিটির প্রতিনিধি, দেলদুয়ার। এছাড়াও মেলায় কৃষক, গৃহিণী, স্কুল-কলেজের ছাত্র/ছাত্রী, হোটেল/রেষ্টরেন্ট প্রতিনিধিসহ দেলদুয়ার উপজেলার ২৬টি গ্রামের প্রায় ১২০০জন কৃষক এবং সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ মেলায় অংশগ্রহণ করেন। নয়াকৃষি কৃষকের নিরাপদ খাদ্য মেলার সঞ্চালনা করেন ফাহিমা খাতুন লিজা, এবং স্বাগত বক্তব্য রাখেন. রবিউল ইসলাম চুন্নু, সমন্বক, রিদয়পুর বিদ্যাঘর, উবিনীগ, টাঙ্গাইল।
নয়াকৃষির কৃষকদের অংশ গ্রহন
সেনেটারী ইন্সপেক্টর পুতুল রানী সাহা বলেন, দেলদুয়ারকে নিরাপদ খাদ্য উপজেলা হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেই হিসাবে নিরাপদ খাদ্য পেতে হলে ক্ষেত থেকে পাত পর্যন্ত অভ্যাসের পরিবর্তন করতে হবে।
শিক্ষা অফিসার আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আজকে আমরা নিরাপদ খাদ্যের মেলায় এসেছি প্রত্যেকে কোন কোন না ওষুধ খাই। কেন খাই?। এতো রোগ কেন হচ্ছে? দেশে এক সময় খাদ্যের অভাব ছিল। এখন খাদ্যের অভাব নাই। কিন্তু যে খাদ্য খাই সেটা বিষ মিশ্রিত খাদ্য। অনেক রোগ-জীবাণু হাতের দ্বারা শরীরে ঢোকে। ভাল করে হাত ধোয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। এরপর তিনি সবাইকে হাত ধোয়া অনুশীলন করে দেখান।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার নিয়ন্তা বর্মণ বলেন, আমাদের দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। এখন নিরাপদ খাদ্য গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। বেগুন, কুমড়া বেশি সার-বিষ ব্যবহার হয়। ১৮০দিনে বেগুনে ১৫০দিন বিষ ব্যবহার হয়। গবেষণায দেখা গেছে এসব সবজী খেয়ে নারীদের বন্ধ্যাত্ব রোগ হচ্ছে। কৃষিতে অনেক নতুন নতুন প্রযুক্তি আসছে। উত্তম কৃষি পদ্ধতি, সুষম মাত্রায় সার ব্যবহার করে আপনারা সুফল পাবেন।
উপজেলা প্রাণী সম্পদ অফিসার ডাঃ হাবিবুর রহমান বলেন, খাদ্য যারা উৎপাদনকারী তারা একইসাথে গ্রহণকারী। মুরগী হাতে নিলে হাত পরিষ্কার না করে খাবারে হাত দিলে খাবার দূষিত হবে। আমার তিনটি সেক্টরে ডিম, দুধ , মাংস নিরাপদ করতে চাই। আগামী ৬ মাসের মধ্যে দেলদুয়ারে নিরাপদ পোল্ট্রি মাংস উৎপাদনের উপজেলা ঘোষণা দিতে চাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাদিরা আখতার বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ দেশ। এক সময় খাদ্যে মন্দা, হাহাকার ছিল। আমরা কৃষি, শিক্ষা, মৎস্য, প্রশাসন বিভাগ সবার দৌড়গোড়ায় সেবা পৌছে দিতে কাজ করছি। অনেক কৃষক ভাইরা বোনেরা আছেন মহান দায়িত্ব আপনাদের । নিরাপদ খাদ্য পেতে সকলে একযোগে কাজ করব। আমার সামনে মায়েরা আছেন সন্তানদের সুশিক্ষা দিয়ে গড়ে তোলার দায়িত্ব আপনাদের।
সভাপ্রধান উপজেলা চেয়ারম্যান এসএম ফেরদৌস আহম্মেদ বলেন, সারা বাংলাদেশে দেলদুয়ার ব্যতিক্রম উপজেলা। নিরাপদ খাদ্য উপজেলা ঘোষনা করে কাজ করে যাচ্ছি। বাজার থেকে কোন ফল-মূল আনলে না ধুয়ে খেলে অনিরাপদ হয়ে যাবে। আর আমার কৃষক ভাইয়েরা আপনাদের অনেক ধন্যবাদ এই উপজেলাকে নিরাপদ খাদ্য উপজেলা বাস্তবায়নের জন্য আপনারা কাজ করে যাচ্ছেন। নিরাপদ খাবার খাওয়ার পাশাপাশি জামা-কাপড় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে। হাত ধুয়ে পরিষ্কার কাপড়ে হাত ধুতে হবে। এছাড়াও গৃহিণী, ছাত্রী, নয়াকৃষির কৃষক, হোটেল রেষ্টুরেন্টের মালিক নিরাপদ খাদ্য বিষয়ে বক্তব্য দেন।
নয়াকৃষি কৃষকদের পরিবেশনায় চলে নাচ. গান ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান
মেলায় কৃষকদের উৎপাদিত নিরাপদ সব্জী, নিরাপদ খাদ্য সহ ,নয়াকৃষি কৃষকদের বীজ, নিরাপদ পথ খাবার সহ কৃষকদের নানা ধরনের ষ্টল রয়েছে।
উবিনীগের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবি ফরহাদ মজহার বলেন, আজ আপনারা এখানে একত্রিত হয়েছেন এখানে একটি বড় প্রতিষ্ঠান আছে। ফুড সেফটি নেটওয়ার্ক। বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে যারা কাজ করে। খাদ্যকে নিরাপদ করার জন্য যারা কাজ করে তারা আপনাদের সাথে আছে। বাংলাদেশে খাদ্য নিয়ে যারা কাজ করে তাদের নিজেদের মধ্যে একটা নেটওয়ার্ক আছে। বীজকিস্তার ফাউনডেশান বীজ নিয়ে কাজ করে। এরপর আপনাদের প্রিয় প্রতিষ্ঠান উবিনীগ -উন্নয়ন বিকল্পের নীতি নির্ধারণী গবেষণা। আজ নয়াকৃষি কৃষকের নিরাপদ খাদ্য মেলা। এখানে কারা কারা নয়াকৃষির কৃষক আছেন। প্রশ্নের উত্তরে নয়াকৃষির কৃষকেরা হাত তোলেন। অনেক পুরনো নয়াকৃষির কৃষকেরা আছেন। যাদের দীর্ঘ পরিশ্রমের ফসল আজ নয়াকৃষি কৃষকের মেলা। আপনারা নয়াকৃষি না করলে দেশী বিদেশী সংগঠন একত্রিত হতো না। নয়াকৃষি কি করে আপনারা জানেন? উত্তরে মামুদপুর গ্রামের কৃষক নুরজাহান বেগম বলেন, বিষমুক্ত কৃষি, জৈবসার দিয়ে ফসল চাষ। ভাইয়া বলেন, নয়াৃকষি বিষ, সার ব্যবহার করে না। আমরা যখন শুরু করেছিলাম লোকে তখন পাগল বলত। এখন নয়াকৃষি সারা বিশ্বে পরিচিত। নয়াকৃষি করলে, সার-বিষ না দিলে কুড়িয়ে পাওয়া শাক পাবেন। দেশে কোন গরীব থাকবে না। ১০০ভাগ খাওয়ার মধ্যে ৪০ভাগ কুড়িয়ে খেতে পারে। চাষ করা লাগে না। গরু পালতে পারেন। আগে ধান গাছ লম্বা ছিল । ধান কেটে জমিতে ধানের লম্বা অংশ থাকত। দেশী মুরগী নাই দেশী ডিম নাই। আমরা বলেছি সার-বিষ ব্যবহার করলে কৃষি ধ্বংস হবে কৃষকও গরীব হবে। তাই হয়েছে অনেক কৃষকের সন্তান এখন মালয়েশিয়া, সৌদি-আরব চলে গেছে। মেয়েরা ঢাকায় গার্মেন্টে কাজ করছে। নয়াকৃষি না করলে আপনাদের এই অবস্থা। আপনি খাওয়াতে পারছেন না। কোম্পানীর বোতলের পানি আপনরা কিনে খাচ্ছেন। কোম্পনী এক সময় পানি নিয়ে নেবে তখন আপনাদের পানি কিনে খেতে হবে। হাঁস-মুরগী পালা বন্ধ হয়ে গেছে। কবুতর নাই। এই গ্রামে লক্ষ লক্ষ কবুতর হারিয়ে গেছে। মুরগী, গবাদী পশু নষ্ট হয়েছে। নয়াকৃষি না করলে গরীব হবে। অল্প কিছু ধনী আর সব গরীব হবে। বাংলাদেশে আল্লাহ নিয়ামত দিছে। সব নেয়ামতের বিশ্বাস থাকার কথা। যা কিছু কৃষির জন্য দরকার আল্লাহ দিয়েছেন। আপনাকে খুঁজে বের করতে হবে। এটাই নয়াকৃষি। আপনাকে কমপক্ষে ৫০০করে মুরগী পালন করতে হবে। সরকার আপনাকে কিছু দেবে না। প্রথম কাজ খাদ্য নিশ্চয়তা এরপর নিরাপদ খাদ্য বাজারে কিছু বিক্রি করতে পারেন। আপনারা যারা আছেন দীর্ঘদিনের একত্রে ছড়িয়ে দেবেন। আর্থিক উন্নতি হতে হবে। ছেলে-মেয়েদের স্কুলে পাঠাতে হবে। নয়াকৃষি কথার অর্থ নিরাপদ খাদ্য খাওয়া।
বক্তব্য রাখছেন রবিউল ইসলাম চুন্নু, সমন্বয়ক উবিনীগ টাংগাইল
বক্তব্য রাখছেন নয়াকৃষির কৃষক
বক্তব্য রাখছেন নয়াকৃষির কৃষক
বক্তব্য রাখছেন নয়াকৃষির কৃষক
নয়াকৃষির কৃষকদের অংশ গ্রহন
আরো দেখুন:
টাঙ্গাইলরে বিষ্ণুপুর গ্রামে 'নিরাপদ খাদ্য মেলা' অনুষ্ঠিত
টাঙ্গাইল নিরাপদ খাদ্য সমাবেশ ও মেলা: এবার গড়াসিন গ্রামে